সরকার যে সংলাপ শুরু করেছে তা প্রহসন, প্রতারণামূলক, পিঠা উৎসবের, গণতন্ত্র ধ্বংস করার সংলাপ। এ সংলাপ ভোট ডাকাতির প্রকল্প। এর মাধ্যমে সরকার আবারও ভোট ডাকাতির নতুন কৌশল বের করছে। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে সারাদেশে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার নরসিংদীতে এসব কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এছাড়া ঝিনাইদহে জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এস এম মশিয়ূর রহমান বলেন, মানুষ জেগেছে পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেবে দেশের জনগণ। জনতার সাগরে ঢেউ জেগেছে। এই উত্তাল ঢেউয়ে হাসিনা ও তার দুর্নীতিবাজ সরকার বঙ্গপোসাগরে ভেসে যাবে। ভোলায় সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাটা কারো দয়া নয়, আইনগত অধিকার। বর্তমান সরকার বিভিন্ন নাটকের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে, ফেনীতে ১৪৪ ধারা ভেঙে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। নোয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশ পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।
নরসিংদী শহরের চিনিশপুরের তিতাস গ্যাস রোডে অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রিজভী আহমেদ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আব্দুস সালাম, শিরিন সুলতানা, সরাফত আলী সপু, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সাইফুল ইসলাম নীরব, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক প্রমুখ।
সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষ এখন আওয়ামী লীগকে ঘৃণা করে। আমাদের আজকের এ গণসমাবেশ দেখে শুধু আওয়ামী লীগ নয়, প্রশাসনও ভয় পেয়েছে। যে কারণে বিএনপিকে তারা মাঠে ময়দানে সভা করতে দেয়নি। তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সংলাপের সমালোচনা করে বলেন, সংলাপ কোনো শীতের পিঠা উৎসব না। এ সংলাপ প্রহসনের সংলাপ। এ সংলাপকে লাথি মেরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যদি খালেদা জিয়ার কিছু হয় তা হলে এ দায় সরকারকে নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল নরসিংদী পৌর ঈদগাহ মাঠে। কিন্তু আমাদেরকে সে সভা করতে দেয়নি পুলিশ। পুলিশ জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে তারা তাদের সংবিধানের পবিত্র শপথ লঙ্ঘন করেছে।
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী মাঠে জেলা বিএনপি এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহŸায়ক অ্যাডভোকেট এস এম মশিয়ূর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, কেন্দ্রীয় নেতা বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু প্রমুখ। এছাড়া আশপাশ জেলা থেকে বিএনপির অর্ধশত নেতা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। তারা ভারতের ট্রেনিং ক্যাম্পে বসে বসে রেশন খেয়েছে আর নারী নিয়ে ফ‚র্তি মেরেছে। শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা ঘোষণা তো দূরের কথা স্বেচ্ছায় পাকিস্তানীদের হাতে ধরা দিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটিয়েছেন। অথচ শেখ মুজিবকে আজ মুক্তিযুদ্ধের বড় ফেরিওয়ালা বানিয়েছে হাসিনা।
সমাবেশে মসিউর রহমান বলেন, ভারতের মোদি সরকারের সঙ্গে অনেক পিরিত করেছিলেন, এখন কিন্তু সেই মোদি সরকার বাইডেনের সঙ্গে হাসিনাকে ছুড়ে ফেলেছে। ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদকে দিয়ে অনর্গল মিথ্যা বলিয়েও হাসিনার শেষ রক্ষা হবে না।
খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আইনমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, বিনা ভোটের সরকারের আইনী যুক্তি দেখতে দেখতে মানুষ আজ বিরক্ত। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, কুইক রেন্টালে হাজার হাজার কোটি লুট হয়, কাঁটাতারে ফেলানীর লাশে ঝুলে থাকে, ব্যাংক ঋণের নামে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয় সেদিন কোথায় থাকে আপনাদের আইন।
প্রশাসনের বাঁধা উপেক্ষা করে বুধবার ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল মাঠে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা। পথে পথে জনস্রোত ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তাঘাট বন্ধ ও যানবাহন আটকিয়েও বিএনপি নেতাকর্মীদের দমাতে পারেনি। ফলে দুপুর ১২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টার পর থেকে জনসভাস্থলে গ্রাম থেকে মানুষ সমবেত হতে থাকেন। দুপুর হওয়ার আগেই উজির আলী স্কুলের বিশাল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, নলীনী দাস স্কুল মাঠে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মেজর জিয়ার নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি আর তারা বলছে মেজর জিয়া নাকি মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ দেশের মানুষ জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহীর কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মাহবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল) আকন কুদ্দুসুর রহমান,ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহীম, কেন্দ্রীয় যুবদল যুগ্ম সম্পাদক বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল ইসলাম নয়ন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হায়দার আলী লেলীনসহ জেলা ও উপজেলা বিএনপির, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষকদলসহ সকল অংঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ১৪৪ ধারা ভেঙে শরীরে কাফনের কাপড় জড়িয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা ফেনী শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
গতকাল রাতে বিএনপির সমাবেশস্থল শহরের ওয়াপদা মাঠে হঠাৎ যুবলীগের কর্মী সমাবেশ ঘোষণা করায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১৪৪ ধারার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই সমাবেশ সফল করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে থাকে। সমাবেশের স্থান থেকে কয়েক দফায় বিএনপির নেতা কর্মীদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সকাল ১১টার দিকে শহরের ইসলামপুর রোডস্থ বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়ার সময় পুলিশী বাধার মুখে পড়ে। বেলা ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্নস্থানে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এ সময় অন্তত ২ হাজার নেতাকর্মী গায়ে কাফনের কাপড় জড়িয়ে রামপুর সৈয়দ বাড়ী থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টগুলো প্রদক্ষিণ করে দাউদপুর ব্রীজের কাছে গিয়ে শেষ হয়। এছাড়াও জেলা মহিলা দল,যুবদল ও ছাত্রদল শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি,ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: নিজাম উদ্দিন জানান, শহরে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সকালে শহরের ইসলামপুর রোডস্থ বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তারা সমাবেশের প্রস্ততি নিতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে সরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করে পুলিশ।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালী পৌরসভা গেইট সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে তিনি আসতে পারেননি। এরআগে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে ও বিভিন্ন যানবাহনে সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হয় দলের নেতাকর্মীরা জনসমুদ্রে পরিণত করেন পুরো মাঠকে।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি’র সভাপতিত্বে সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, কাজী মফিজুর রহমান, মামুনুর রশিদ, অ্যাডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, ফোরকান ই আলম, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সাংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, সেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি আনু মোহাম্মদ শামীম আজাদ প্রমুখ।