ফেসবুক আইডি নষ্ট হয়ে যাওয়া, ডিজেবল হয়ে যাওয়া কিংবা ব্যান করে দেওয়া – প্রায়সই এমন অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারের মুখোমুখি হতে হয় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের। মূলত ফেসবুক এর কমিনিউটি স্ট্যান্ডার্ডের বিপক্ষে কোনো অ্যাকটিভিটি দেখলে ফেসবুক থেকে টেম্পরারি বা পারমানেন্ট ব্যান বা ব্লক দেওয়া হয়।
ফেসবুক এর কমিনিউটি স্ট্যান্ডার্ড পেজে গেলে অনেক তথ্য থাকলেও বিশাল হওয়ার ফলে তা পড়ে সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। মূলত কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত কনটেন্ট ফেসবুকে পোস্ট করা সম্পূর্ণ ফেসবুক এর কমিনিউটি স্ট্যান্ডার্ড বিরোধী।
আপনার ফেসবুক আইডি যদি ডিজ্যাবল হয়ে থাকে তাহলে প্রথমেই চিন্তা করুন যে আপনি আসলে কী পোস্ট করেছিলেন। অথবা আপনার একাউন্টটি কোনো ফেইক একাউন্ট কি-না।
আপনার ব্যান হওয়া ফেসবুক আইডি ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে কিনা তা নির্ভর করছে ঠিক কী কারণে আপনার একাউন্টটি ব্যান করা হয়েছে। অনেক সময় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কয়েকদিনের জন্য আইডি ডিজেবল করে থাকে।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই প্রথমেই জেনে নিবো কি সব কারণে ব্যান বা ডিজেবল হয়ে যেতে পারে আপনার ফেসবুক আইডি। এরপর আমরা দেখব ফেসবুক আইডি ব্যান হলে ফিরিয়ে আনবেন কিভাবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
আবার কোনো কোনো সময় ফেসবুক আইডি চিরতরে ব্যান বা নষ্ট হয়ে যায়। ফেসবুক আইডি ডিজেবল হলে নিচের স্ক্রিনশটের মত কিছু একটা দেখতে পাবেন আপনার লগইন পেজে।
তবে আপনি যদি বার বার একই ভুল না করে থাকেন, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। পোস্টটি পুরোটা পড়ুন।
সহিংসতা ও অপরাধমূলক আচরণ
হুমকি ও সহিংসতার ইংগিত দেয়, এমন যেকোনো ধরনের কনটেন্ট ফেসবুকে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ। উল্লেখ্য যে ফেসবুক এর সিস্টেম “সাধারণ বার্তা” ও “সহিংস আচরণপূর্ণ বার্তা” এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সক্ষম। ফেসবুক এ যেসব অ্যাকটিভিটি ফেসবুক ব্লক করে ও ব্লক করার জন্য কাজ করছে তা হচ্ছেঃ
সন্ত্রাসী কার্যকলাপ
দলবদ্ধ ঘৃণা
গণহত্যা বা সিরিয়াল কিলিং
মানব পাচার
দলবদ্ধ সহিংসতা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ
রেগুলেটেড পণ্য
ওপিওডের মতো রেগুলেটেড পণ্য সম্পর্কে ফেসবুকে এড দেখানোর অনুমতি সম্পর্কে জানতে চেয়ে ক্যাপিটল হিলে ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ কে ডেকে পাঠানো হয়। ড্রাগস, নন-মেডিক্যাল ড্রাগস, আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও একই ধরনের অনেক পণ্য সম্পর্কে ফেসবুক এর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফেসবুক এটি জানিয়ে দিয়েছে যে আগ্নেয়াস্ত্র এর মত বিষয়ে আলোচনা ফেসবুকে করা যাবে।
এছাড়াও অপরাধের প্রচার করলে কিংবা দলবদ্ধ হয়ে কারো বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোকেও ফেসবুক এর কমিনিউটি স্ট্যান্ডার্ড এর বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা – ডিজেবল ফেসবুক আইডি সমস্যার অন্যতম কারণ
ফেসবুক এর কমিনিউটি গাইডলাইনস এর ‘সেফটি’ সেকশনে ফেসবুক জানিয়েছে জননিরাপত্তার প্রকৃত বা সরাসরি ক্ষতি ক্ষতির জন্য দায়ী কনটেন্ট ব্যান, অ্যাকাউন্ট ডিসেবল, এমনকি প্রয়োজনে আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার সাথেও কাজ করবে ফেসবুক। এছাড়াও আত্মহত্যা কিংবা আত্মঘাতী কনটেন্ট পোস্ট করলেও সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিবে ফেসবুক। ফেসবুক এ আরো ব্যান করা হবেঃ
চাইল্ড ন্যুডিটি বা বাচ্চাদের সেক্সুয়াল এক্সপ্লোয়টেশন (যেমনঃ বাচ্চাদের নগ্ন ছবি, এমনকি ভালো মনোভাব নিয়ে করা পোস্ট ও)
যৌন সহিংসতার ছবি
ব্যাক্তিগত পর্যায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে হেয় করা বা লজ্জা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা পোস্ট
হয়রানি
আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতি করতে সক্ষম অন্যের এমন ব্যাক্তিগত তথ্য পোস্ট
তবে ফেসবুক এটি জানিয়েছে যে যেহেতু পাবলিক ফিগারদের সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা একটি সাধারণ ব্যাপার, সেক্ষেত্রে পাবলিক ফিগারদের সম্পর্কে করা কটুক্তি নিয়ে ফেসবুক কোনো পদক্ষেপ না ও নিতে পারে। তবে সীমা অতিক্রমকারী ঠিকই শাস্তি পাবে।
আপত্তিকর কনটেন্ট
বিভিন্ন ক্যাটাগরির আপত্তিকর কনটেন্ট ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যান এর কারণ হতে পারে। এর মধ্যে কিছু প্রধান কারণ হলোঃ
ঘৃণাবাচক কনটেন্ট পোস্ট
দৃশ্যমান সহিংসতা যা “সহিংসতাকে প্রোমোট করে বা অন্যের কষ্ট বা অপমানকে উদযাপন করে।” অবশ্য “কোনো সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে” এই ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করা যাবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে ফেসবুক দৃশ্যমান কনটেন্ট সম্পর্কে অপ্রাপ্তবয়স্কদের একটি সচেতনতামূলক বার্তা দেখানো হবে
এডাল্ট ন্যুডিটি ও সেক্সুয়াল অ্যাকটিভিটি (তবে সচেতনতামূলক বিশেষ সীমার মধ্যে থাকা নগ্মতার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই)
গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির শিকার ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে “নিষ্ঠুর এবং সংবেদনশীল” বলে বিবেচিত হওয়া কনটেন্ট।
এছাড়াও ফেসবুক এর রাডারে সন্দেহজনক বলে বিবেচিত হওয়া অ্যাকাউন্টের সাথে যোগাযোগ এর কারণেও ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যান বা ডিসেবল হতে পারে।
তথ্যের অসত্যতা – ডিজেবল ফেসবুক আইডি সমস্যার অন্যতম কারণ
পোস্ট করা কনটেন্ট এর সত্যতা নিয়েও ফেসবুক ব্যাপক হারে কঠোর। উল্লিখিত ক্যাটাগরির বাইরে যেসব কারণে ফেসবুক ব্যান বা ব্লক দেওয়া হয়, সেগুলো হলোঃ
স্প্যাম (লাইক, ফলোয়ার বা শেয়ার পেতে পোস্ট করা বিভ্রান্তিকর বা ভুল তথ্য)
মিসপ্রেজেন্টেশন – ফেসবুক ব্যবহারে একজন বাস্তব ও যাচাইযোগ্যভাবে পরিচিত হতে হবে
মিথ্যা সংবাদ (ফেসবুক জানিয়েছে যে “মিথ্যা সংবাদ” কমাতে প্ল্যাটফর্মটি চেষ্টা করছে, তবে কৌতুক এর অনুমতি আছে। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে মিথ্যা খবর অপসারণ না করে বরং এর পরিবর্তে, নিউজ ফিডে কম দেখিয়ে ভুল ধারণা ছড়ানো হ্রাস করে)
একই শ্রেনীতে “memorialization” ক্যাটাগরি যোগ করেছে, যার মাধ্যমে মারা গেছেন এমন ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে স্মরণ করা যায়।
স্বত্বাধিকার
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী যা কিছু পোস্ট করেন, তার স্বত্বাধিকার তিনি নিজেই সংরক্ষণ করে থাকেন। ফেসবুকে পোস্ট করা কোনো কনটেন্ট এর মালিকানা ফেসবুক নয়, বরং এর পোস্টদাতার। এছাড়াও নিজের আইনি নামেই ফেসবুক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে ফেসবুক নিজেই। এক্ষেত্রে ফেসবুক একাউন্ট লক হয়ে গেলেও ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে ফিরে পাওয়া সম্ভব।
তবে একই নিয়মের বিপরীত নিয়ম হচ্ছে কোনো ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি কোনো পোস্টের আইনত মালিক না হওয়ার পরেও তা পোস্ট করে থাকেন সেক্ষেত্রে ফেসবুক উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। কপিরাইট, ট্রেডমার্ক ও অন্যান্য আইনি অধিকার ফেসবুক এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার
অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলেও অ্যাকসেস হারাতে পারেন আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের। তবে আপনার একাউন্ট দীর্ঘদীন যাবত ব্যবহার না করলে সেক্ষেত্রে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কোনো ধরনের ক্ষতি হয়না। এক দিনে অতিরিক্ত সংখ্যক পোস্ট শেয়ার করা কিংবা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোও হতে পারে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যান বা ডিজেবল এর কারণ।
ডিজেবল ফেসবুক আইডি সমস্যার অন্যান্য কারণ
সকল ব্যবহারকারীর নিজস্ব সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে ব্যবহারকারীর বিভিন্ন প্রয়োজনে সাহায্য করতে ফেসবুক বদ্ধপরিকর৷ কেউ যদি নিজের কিংবা তার পরিবারের মৃত বা অক্ষম কারোর পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ফেসবুককে কোনো অনুরোধ জানায়, সেক্ষেত্রে ফেসবুক উক্ত অনুরোধ প্রয়োগ করে থাকে।
এছাড়াও অপ্রাপ্তবয়স্কদের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও আলাদা উদ্যোগ নিয়েছে ফেসবুক। যেমনঃ
১৩ বছরের কম বয়সীদের ফেসবুক আইডির তৎক্ষনাৎ অপসারণ
শিশু নির্যাতনের ছবি অপসারণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ (যেমনঃ প্রাপ্তবয়স্কের দ্বারা মারধর করা, শ্বাসরোধ করা, ইত্যাদি)
জনপ্রিয় অপ্রাপ্তবয়স্কের উপর অ্যাটাক এড়াতে বাবা-মার পক্ষ থেকে কনটেন্ট অপসারণের অনুরোধ।
ব্যান বা ডিজেবল হওয়া ফেসবুক আইডি ফিরিয়ে আনার উপায়
উপরোক্ত কোনো কারণ দেখিয়ে যদি ফেসবুক ভুল করে আপনার অ্যাকাউন্ট ডিসেবল বা ব্যান করে দেয়, সেক্ষেত্রে একটি ফরম পূরণ করে ব্যান বা ডিজেবল হওয়া ফেসবুক আইডি ফিরিয়ে আনা যাবে।
ফেসবুক আইডি ডিসেবল হয়ে গেলে এখানে ক্লিক করে ফর্মটি পূরণ করে ব্যান বা ডিজেবল হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনার আবেদন করতে পারনে।
এই ফরমটি খুব সাধারণ। ব্যাসিক কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে এখানে। এর মধ্যে আপনার ফেসবুক ইমেইল এড্রেস বা ফোন নম্বর, পুরো নাম এবং আইডি কার্ড চাওয়া হয়েছে। এই আইডি হতে পারে ন্যাশনাল আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রভৃতি। আপনার এসব আইডি না থাকলে শক্তিশালী এবং সঠিক অন্যান্য আইডিও তারা রিভিউ করতে পারে।
এই লিংক থেকে জেনে নিন ফেসবুক ঠিক কোন কোন আইডি গ্রহণ করে থাকে। মনে রাখবেন, ফেসবুক একাউন্ট ডিজেবল হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উপরোক্ত ফরমে আবেদন করতে হবে।
এরকম দেখা গেছে যে, ফেসবুক হঠাত কোনো আইডি পুরোপুরি ব্যান করে দেয় না। বরং তারা শুরুতে কয়েকদিনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু ফিচার বন্ধ করে দেয়। যেমন, আপনাকে ১ সপ্তাহের জন্য কমেন্ট ও স্ট্যাটাস পষ্ট করা থেকে ব্যান করে দিতে পারে। ফলে আপনি ১ সপ্তাহ কোনো কমেন্ট বা পোস্ট করতে পারবেন না। এরপর আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এরকম সাময়িক ব্যান করার পরেও আপনার একাউন্ট থেকে যদি ফেসবুকে নিষিদ্ধ কাজ করা হয় তাহলে আপনার একাউন্ট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে। অনেক সময় ফেসবুকের সিস্টেমে ত্রুটির কারণে অনেকের ফেসবুক আইডি ডিজেবল হয়ে যায়। সেসব ক্ষেত্রে উপরে দেয়া নিয়মে আপিল বা আবেদন করলে ফেসবুক আবার আইডি ফিরিয়ে দেয়।