জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত সব স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে আহত ও শহীদরা রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে সরকার অবগত।
সচিবালয়ে আহতদের সাথে দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। বুধবারে রাতে আন্দোলনরত আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৃহস্পতিবার(১৪ নভেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ উপদেষ্টা।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সভাপতিত্বে বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বৈঠকে অংশ নেন শতাধিক আহত শিক্ষার্থীও।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, আহতদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। ১৭ নভেম্বরের পর একটি সাপোর্ট সেন্টার করা হবে তাদের জন্য। এটিসহ গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় থাকবে ফার্স্ট ট্র্যাক সার্ভিস।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে জানিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ আহত যোদ্ধাদের ইউনিক আইডি কার্ড থাকবে। সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তারা সারা জীবন বিনামূল্যে সেবা পাবেন। যেসব বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সরকারি চুক্তি থাকবে সেখানেও বিনামূল্যে সেবা পাবেন তারা।’
তিনি আরও বলেন, এতোদিন ব্যক্তিগতভাবে যত খরচ হয়েছে তার যথাযথ তথ্য দিলে ফেরত দেওয়া হবে। চোখ হারানোদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামর্থ্যের সঙ্গে যথাযথ প্রশিক্ষিত করে উনাকে ও পরিবারকে সহায়তা করা হবে। পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় বিশেষায়িত সেবা মিলবে। দেশে চিকিৎসা সেবা না থাকলে এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে সুপারিশ করা হলে বিদেশে চিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। কোনো স্থবিরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। সব হাসপাতালে ফাস্টট্রাক সার্ভিস পাবেন। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে এসব কিছুর লিখিত রূপরেখা দেয়া হবে।
এদিকে বৈঠকে অংশ নেওয়া আহত শিক্ষাথীরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।
তাদের দাবিগুলো হলো—
১. গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের অতিদ্রুত মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা আহত হলে যে মানের চিকিৎসা দেয়া হতো সে মানের চিকিৎসা দিতে হবে।
২. গণঅভ্যুত্থানে যারা আহত হয়ে নিজ খরচে চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হবে।
৩. গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা কার্ডের মাধ্যমে একটি প্রজন্ম পর্যন্ত মাসিক ভাতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে জাদুঘর নির্মাণ করে প্রতি বছর ১ জুলাই হতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে।
৫. গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়ে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের মেডিকেল ফাইল তদন্ত করে কোনো ডাক্তার বা মেডিকেলের অবহেলার কারণ খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
৬. দ্রুত সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. আগামীতে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একাংশ। মাঝরাতেও তাদের বিক্ষোভ অবস্থান অব্যাহত থাকে।
পরে রাত আড়াইটার দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টা সেখানে উপস্থিত হয়ে দাবি মানার এবং আহতদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈঠকের আশ্বাস দিলে হাসপাতালে ফিরে যেতে রাজি হন বিক্ষোভকারীরা।এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।