তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের যে বক্তব্য প্রেস সচিব শফিকুল আলম তুলে ধরেছেন, তাতে এটা সুস্পষ্ট যে, সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির দাবি গ্রাহ্য করেনি।

শনিবার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে সরকার প্রধানের বৈঠকের পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘এক কথার মানুষ’ উল্লেখ করে তার প্রেস সচিব বলেছেন, নির্বাচন প্রশ্নে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত যে সময় দেওয়া হয়েছিল, তার বাইরে কিছুই হবে না।

যে তিনটি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সংলাপ করেছে, তাদের মধ্যে কেবল বিএনপি ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়া এবং সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে। জামায়াত বলেছে আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এনসিপি চেয়েছে, বিচার,সংস্কার ও নির্বাচনের সমন্বিত পরিকল্পনা। এই দল দুটি আবার ডিসেম্বর থেকে জুনের সময়সীমা নিয়ে আপত্তি জানায়নি।

এই বৈঠকে বিএনপির তরফে দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের অপসারণ দাবি করা হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছে। এনসিপি বরং আওয়ামী লীগ শাসনামলে সব নির্বাচন বাতিল চেয়েছে। বলেছেন, এটি করা হলে আদালতে গিয়ে কেউ বিশৃঙ্খলা করতে পারবে না।

দলটির এই অবস্থান স্পষ্টতই বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। আবার দলটি আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়েছে।

অবশ্য এনসিপির এই দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব।

বিএনপি যেসব দাবি তুলে ধরেছে, তার বিষয়ে সরকারের তরফে কোনো আশ্বাসই আসেনি। প্রেস সচিবের বক্তব্যেও ছিল একই সুর।
বিএনপির ডিসেম্বরে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী- এই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, “৩০ জুন (২০২৬ সাল) সুনির্দিষ্ট ডেট। নির্বাচন এর বাইরে যাবে না। এ সিদ্ধান্তে সমর্থন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ।”

জামায়াত ও এনসিপি প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমা সমর্থন করলেও সুনির্দিষ্ট পথনকশা চেয়েছে। সরকারের কাছ থেকে এ সুনির্দিষ্ট পথনকশা আসলে কবে পাবে?- একজন সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্ন ছিল প্রেস সচিবের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, “প্রফেসর ইউনূস বারবার বলেছেন, ইলেকশন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। … এই জুন, ৩০ তারিখটা একটা সুনির্দিষ্ট ডেট। উনি বলছেন যে, এর বাইরে যাবে না। উনি এক কথার মানুষ।”

‘বিএনপি যদিও বলেনি, তবে দেখে মনে হয়েছে আজকের আলাপে তারা সন্তুষ্ট না’এক সংবাদকর্মীর এমন মন্তব্যের পর প্রেস সচিব হেসে বলেন, “এটা বিএনপির বিষয়।”

‘বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন তারা ডিসেম্বরে নির্বাচনের যে দাবি করেছেন, সে বিষয়ে প্রেস উইং মানে আপনারা জানাবেন’, বলেন এক সংবাদকর্মী।

প্রেস সচিব বলেন, “আমরা তো বলেছি, যা বলছি তাই।”

শফিকুল বলেন, “মিটিংয়ে প্রত্যেকটি পার্টিই তাদের স্ব স্ব অবস্থান তুলে ধরেছে। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তার নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তারা উনাকে অনুরোধ করেছেন যেন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বেই একটি ফেয়ার ইলেকশন হয়।”

এসময় তিনটি দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের সারাংশ তুলে ধরেন তিনি।

বৈঠকে জামায়াতের বক্তব্য ও প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন প্রশ্নে অবস্থান ছিল একই রকম।
শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন চেয়েছে; জামায়াত বলেছেন যে, তারা মনে করেন রিফর্ম প্রক্রিয়া শেষ করতে ডিসেম্বরের মতো লেগে যাবে…

“তিনটি পার্টিকেই প্রফেসর ইউনুস আজকে বলেছেন, ইলেকশন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। জামায়াত এই টাইমলাইনটি সমর্থন জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে এতে তাদের সমর্থন আছে। এনসিপিও একই।”

প্রেস সচিব আরও বলেন, এনসিপি ও জামায়াত বলেছে যে তারা মনে করে না বর্তমানে সুষ্ঠু ইলেকশনের জন্য কোনো পরিস্থিতি আছে। তারা নির্বাচন কমিশনের সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বলেছে।

এই আলোচনায় সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি দলগুলোকে কী বলেছেন, তাও তুলে ধরেন প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, “আলী রিয়াজ বলেছেন যে সংস্কার প্রক্রিয়া ২০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে জুলাই…জুলাই প্রক্লেমেশন নিয়েও আমাদের কাজ হচ্ছে, আশা করি খুব দ্রুত তা হবে।”

বৈঠকে এনসিপি যেসব দাবি তুলে ধরেছে, তা স্পষ্টতই বিএনপির দাবির বিরুদ্ধে যায়।
গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রাণহানির বিচার প্রক্রিয়া এ মাসের মধ্যেই শুরু হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোকে আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান প্রেস সচিব। বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে, বলেন এমনটিও।

এই বৈঠকে দলগুলোকে সরকার কি কোনো বার্তা দিয়েছে?- এই প্রশ্নে শফিকুল বলেন, “বার্তাগুলো এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে। তারা প্রফেসর ইউনুসের লিডারশিপে অপূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তার লিডারশিপে সবার আস্থা আছে, পুরো জাতির আস্থা আছে।”

বিএনপি যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছেন, এ বিষয়ে ইউনূস কী বলেছেন?- এই প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, “তিনি শুনেছেন।”

উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠনের কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আজকে বিএনপি তাদের কথা বলেছে, আমরা শুনেছি।”