নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-মিছিল করেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুপুর ১২টার দিকে টিএসসির সামনে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বক্তারা নির্যাতনের ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ করেন। একইসঙ্গে এসব জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান তারা।

ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।

সামবেশে ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘বাংলাদেশে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন জড়িত। এর আগে সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগ ধর্ষণ করেছে। এই ধর্ষণ তাদের কাছে এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারা এই কর্মের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ওই ঘটনার মাধ্যমে সেটা বোঝা যায়।’

ছাত্রদল সভাপতি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘এর আগে ছাত্রলীগের ধর্ষণের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রলীগের হাতে আহত হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। এতে দুই শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, আশরাফুল আলম ফকির, ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসেন, নাছির উদ্দিন নাছির, সদস্য কানেতা-ইয়া-লাম লাম, মানসুরা আলমসহ, কেন্দ্রীয়, ঢাবি এবং মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

দুই পক্ষের মধ্যে হাতহাতি

এই সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্রদল। এই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান। এ সময় তিনি সমাবেশে উপস্থিত কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতাদের নাম উল্লেখ করে। সিনিয়রিটি বিবেচনা করে নাম উল্লেখ করা হয়।

এই সমাবেশ চলাকালে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষোভ শেষে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে ছাত্রদল। এই সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ঢাবি শাখার সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান। এ সময় তিনি সমাবেশে উপস্থিত কেন্দ্রীয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল কমিটির নেতাদের নাম উল্লেখ করে। সিনিয়রিটি বিবেচনা করে নাম উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু আমানউল্লাহ আমান যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের (ছাত্রদল মনোনীত সাবেক ডাকসু ভিপি প্রাথী) নাম বলেননি। এ সময় মোস্তাফিজুর রহমান সঞ্চালককে ক্রমানুসারে নামগুলো বলতে বলেন। তখন আমান তাকে গালি দিয়ে বলে, প্রোগ্রাম শেষ করে তোর হাত-পা ভেঙে ফেলব। এরপর উভয়ের মধ্যে বাকবিতাণ্ডা শুরু হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল তাদের থামিয়ে দেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্রদলের একাধিক কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নেতা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রোগ্রাম শেষ হলে আমান, মোস্তাফিজুরসহ অন্যরা রাজু ভাস্কর্য থেকে নিচে নেমে আসে। এ সময় আমান মোস্তাফিজুর রহমানকে কিল, ঘুষি মারতে থাকে। পরে সিনিয়র নেতারা এসে তাদের থামিয়ে দেন।

ঘটনার ভুক্তভোগী মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যম কে বলেন, ‘ঝামেলা হয়েছে। আমরা নিজেরা এটি সমাধানের চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমান বিকেলে গণমাধ্যম কে বলেন, ‘সেন্ট্রাল সভাপতি-সম্পাদক বলে দিয়েছিল, তারা এবং সিনিয়র সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক বক্তব্য দেবেন। কিন্তু আমি যখন সঞ্চালনা করছিলাম, তখন সে (মোস্তাফিজ) বক্তব্য দেবে বলে। কিন্তু অনেক বক্তা থাকায় সবাই ক্লান্ত। কিন্তু সে আমাকে সঞ্চালনা করার সময় বাধা দেয়। আমি তাকে বলি যে, চুপ করো। তখন সেন্ট্রাল সভাপতি- সেক্রেটারি আমাদের থামিয়ে দেন। প্রোগ্রাম শেষ করার পর বন্ধুত্বের খাতিরে আমাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কেন তাকে বক্তব্য দিতে দেইনি। তখন আমি তাকে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদককে দেখিয়ে দেই। ওই সময়টায় জুনিয়ররা পেছন থেকে যা করে তাই হয়েছে। তেমন কিছু না।’

এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধর্ষণবিরোধী এক বিক্ষোভে একই অভিযোগ ওঠে ঢাবি শাখার সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে। তিনি পাশে থাকা এক কেন্দ্রীয় নেতাকে গালি দেন। কথা কাটাকাটি হলে একপর্যায়ে তাকে মিছিল থেকে বের করে দেন। এ ঘটনা দেখে ক্ষুব্ধ হন অন্যরা।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগী নারী (৩৭) মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। গত রোববার ওই নারী বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে ওই নারী অভিযোগ করেছেন, স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। এক মাস ধরে তাঁরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিলেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেন।

এদিকে এ ঘটনার প্রধান আসামি বাদলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। এ ছাড়া এই ঘটনায় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।