করোনাভাইরাসের উৎপত্তি উৎস এই মুহূর্তে ঠেকাতে না পারলে করোনা দ্রুতই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে বক্তব্য দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। একই সঙ্গে প্রতিদিন যদি ৫০০-১০০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা দেয়া যাবে না।
বুধবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় অনলাইনে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত “কোভিড-১৯ দ্বিতীয় ঢেউ এ ক্রমাগত অবনতি, সার্বিক পরিস্থিতি, হাসপাতালের সুযোগ সুবিধা ও শয্যা বৃদ্ধি বিষয়ে বিপিএমসিএ’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের সাথে মত বিনিময় সভায়” প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জাহিদ মালেক বলেন, গত এক মাস আগে আক্রান্তের হার ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এখন এটি প্রায় ২০ শতাংশে চলে গেছে। এখন দিনে প্রায় ৫ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। মৃত্যু সংখ্যাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্যখাতের উদ্যোগে সরকারিভাবে দ্রুততার সাথে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই প্রায় আড়াই হাজার বেড বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৪০টি নতুন আইসিইউ বেড স্থাপন করা হচ্ছে। ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন হাসপাতালটি কভিড ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ণ ইন্সটিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালসহ দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে শতশত শয্যা কভিড ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন যদি ৫০০-১০০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে তাহলে গোটা ঢাকা শহরকে হাসপাতাল করে ফেললেও রোগী রাখার জায়গা দেয়া যাবে না। এর জন্য যা করার এখনই করতে হবে। অর্থাৎ এই মুহূর্তে যা করতে হবে তা হচ্ছে, যে যে স্থান থেকে করোনা সৃষ্টি হচ্ছে সেই সকল স্থানে এখনই জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সবাইকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ১৮টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।সকল পর্যটন কেন্দ্র,হোটেল,যানবাহনসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র সমূহে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।বিয়ে-সাদি,ধর্মীয় অনুষ্ঠান,পিকনিক আয়োজন বন্ধ রাখতে হবে।সকল মানুষকে মুখে মাস্ক পড়তে হবে।কারন এখনই করোনাকে নিয়ন্ত্রণে নিতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে করোনাকে আর খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়বে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সভায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদেরকে কভিড বেড সংখ্যা কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানান। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, এই মুহূর্তে কভিড মোকাবেলা করাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানুষ এখন বেপরোয়া চলাফেরা করছে। এটিকে থামাতেই হবে। পাশাপাশি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও কভিড মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এন্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেবার অনুরোধ জানালে ঢাকার বড় বড় প্রাইভেট মেডিকেলগুলিকে এন্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দেবার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বিপিএমসিএ’র উপদেষ্টা ডা. মো. এনামুর রহমান, বিপিএমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক ও আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার গোসেন খান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম প্রমুখ।