পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় লাইলী আক্তার নামের এক তরুণীকে অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলার তিন আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে পিরোজপুরেরর জেলা ও দায়রা জজ মুহা. মুহিদুজ্জামান এ আদেশ দেন।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া নলকাটা গ্রামের মহিদুল হাওলাদার (৪০), একই গ্রামের মাসুম হাওলাদার (৩৮) ও তাঁর ভাই আবুল হাওলাদার (৩০)। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধাওয়া নলকাটা গ্রামের মামাবাড়িতে থাকেন লাইলী আক্তার (২৭)। তাঁর মামা ছন্দু হাওলাদারের সঙ্গে প্রতিবেশী সায়েদ হাওলাদারের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রাত সোয়া আটটার দিকে ছন্দু হাওলাদারের মেয়ে চম্পা বেগম ও তাঁর ভাগনি লাইলী আক্তার এক প্রতিবেশীর বাড়িতে মুঠোফোনে চার্জ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পূর্ববিরোধের জের ধরে পথে আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা পেছন থেকে লাইলী আক্তারকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন। এ সময় তাঁদের চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা পালিয়ে যান। রাতেই লাইলীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
এ ঘটনায় চম্পা বেগম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে স্থানীয় থানায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভান্ডারিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন আসামি মহিদুল হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার ও আবুল হাওলাদারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন বিচারক।
লাইলী আক্তারের মা মানবরু বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়েকে অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত আসামি সায়েদ হাওলাদারের নাম বাদ দিয়ে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তবে অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ করা তিন আসামির বিরুদ্ধে আমরা সাক্ষ্য দিয়েছি। এরপরও আসামিরা কীভাবে খালাস পেল, বুঝতে পারছি না।’
লাইলী আক্তার বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করব।’
খালাস পাওয়া আসামি মাসুম হাওলাদার বলেন, ‘আমরা নির্দোষ ছিলাম। বাদী ও সাক্ষীরা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেননি।’
সরকারের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) খান মো. আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আসামিদের যাতে উপযুক্ত বিচার হয়, সে জন্য আমরা চেষ্টা করেছি। তবে মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণে কিছু দুর্বলতা থাকায় তাঁরা খালাস পেয়েছেন। বাদী চাইলে আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’