সাজ্জাদ মাহমুদ মনির,সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায় বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ ধরার মহোৎসব।
এ মৎস শিকার রোধে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় ক্রমশ বেড়েই চলছে এ জাতীয় মৎস শিকার এবং শিকারে ব্যবহৃত হচ্ছে নিত্যনতুন আধুনিক কৌশল। যে কৌশিলে ধরা পরে সহজে চোখে ধরা পরেনা এমন অসংখ্য অপরিপক্ব পোণা মাছ সৃষ্টি।
অন্যদিকে স্থানীয় বাজার গুলোতে ডিমওয়ালা মাছ কিনতে উন্মুখ ক্রেতারা। মৎস্য আইনে এই সময় মাছ শিকার নিষিদ্ধ হলেও মানছেন না কেনো জেলেরা। বর্ষার এই সময় গ্রামের খালেবিলে টেলা জালের (ছোট মাছ ধরার ফাদঁ) মাধ্যমে দেশীয় মা ও পোনা মাছ শিকার করে থাকে।
চায়না জাল, এই জাল ছোট বড় সব মাছ আটকা পরে। বস্তা জাল, পুরো নদীতে পেতে রাখে, পানির নিছে বাশ দিয়ে তৈরী করা ছাই। আঞ্চলিক ভাষায় এই ছাই সহ মাছ মারার অসংখ্য কৌশল আবিষ্কার হচ্ছে দিন দিন।
গ্রামের ভাষায় ট্যাংরা, চেঙ্গির পোনা, হউল মাছের পোনা, ছোট বাইম, গুতুমের পোনা, গইন্নার পোনা, গোয়াল মাছের পোনাসহ অপরিপক্ব অসংখ্য দেশীয় মাছ এই বেইন্দিজালনামক ফাঁদের শিকার। আমরা জানি আমাদের দেশে দেশীয় মাছ আজ বিলুপ্ত, তাই বাজারে চলে আসছে নানা ধরণের চাষের মাছ। যে মাছে পুষ্টির চেয়ে অপুষ্টি বেশী, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর না।
এই দেশীয় মাছ বিলুপ্তির কারণে আমারা জেনেশুনে চাষের মাছের সাথে বিষ খেতে বাধ্য। তবে এটা স্পষ্ট যে আমাদের সচেতনতার অভাবে আমাদের ভুলের কারণে সুস্বাদু দেশীয় মাছ আমাদের নাগালে থাকতেও নাগালের বাইরে। যার প্রমাণ অসংখ্য অপরিপক্ব দেশীয় প্রাকৃতিক মাছের মা ও পোনা নিধন।
বাজারে দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে আর পাওয়া গেলেও তার দামে দ্বিগুণ। দিনে দিনে এ মাছের বিলুপ্তির দিকে।
গতবছর যে মাছের কেজী ৫ শত টাকা এবছর তা ৮শত-৭শত টাকা। এর কারন বাজারে চাহিদা অনুযায়ী মাছ কম তাই দামও বেশি। এভাবে পোনা মাছ নিধন প্রক্রিয়ায় অনেক দেশীয় মাছ একদম বিলুপ্ত।
আজকাল এই কারেন্ট জাল/ টেলা জাল বিভিন্ন রকমের জালের মাধ্যমে যে পরিমাণে মাছের পোনা নিধন করা হচ্ছে তা যদি রোধ করা সম্ভব হয় তবে সারা বছর আমাদের দেশে দেশীয় মাছের কোনো অভাব থাকবে না বলে নিশ্চিত। এই মাছ নিধনে জেলেরা যে বেশ লাভবান হচ্ছে তেমনও না। এ মাছগুলো বড় হতে পারলে বা পরিপক্ব হতে পারলে এর মূল্য হতো ২ লক্ষ টাকা সেই মাছ পোনা বা অপরিপক্ব অবস্থায় এখন বিক্রি করছে সর্বোচ্চ ২ শত টাকায়।
এটা স্থানীয় জেলেদের বোকামির শামিল, যদিও জেলেদের এই বিষয়গুলো তে স্থানীয় মৎস অধিদপ্তর কোন রকম সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইন নাই তাই তারা বুঝতেও চায় না এখন এই মাছ গুলো না শিকার করলে এ থেকে এই জেলেরাই বেশী লাভবান হতো।
তাই জেলেরদের নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনের ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করুন। আমাদের উপায় থাকতে আমরা চাষের বিষ খেয়ে অকালে জীবন হারাতে চাই না। এই চাষের এবং হাইব্রিডের তান্ডবে দিনেদিনে আমাদের দেশের মানুষের গড়আয়ু তীব্র গতিতে কমে চলছে এবং আমরা ক্রমশ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছি।
তাই স্থানীয় দেশীয় মাছের জীবন রক্ষায় রক্ষা হবে আমাদের জীবন। ছাতক উপজেলা প্রশাসনের নিকট আকুল আবেদন এই দেশীয় প্রাকৃতিক মাছের মা ও পোনা নিধন রোধে জরুরী ব্যবস্থা নেবেন। মাছের পোনা নিধন রোধে উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।