বগুড়া সদরের মানিকচক উত্তরপাড়ার আতোয়ারা খাতুন (২৯) প্রায় ১১ বছর আগে প্রতিবেশী রবিন ফকিরকে (৩২) ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিলেন। বাবার দেওয়া মিথ্যা অপহরণ মামলায় আদালত গত মাসে তার স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আতোয়ারা। এরপর থেকে স্বামীকে খালাস করতে তিনি ১০ বছরের শিশুকন্যা রুবাইয়াকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আতোয়ারা।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আতোয়ারা খাতুন জানান, তিনি বগুড়া সদরের মানিকচক উত্তরপাড়ার আজিজার রহমানের মেয়ে। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ষষ্ঠ। বাবার দেড় শতাধিক বিঘা জমি রয়েছে। তিনি ২০১১ সালে বগুড়ার নিশিন্দারা উপশহরে মহিলা মাদ্রাসায় আলিম প্রথম বর্ষে পড়াকালে প্রতিবেশী আবদুল কাদেরের ছেলে রবিন ফকিরের প্রেমে পড়েন। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ১৯ বছর বয়সে তিনি রবিনের সঙ্গে পারিয়ে যান। পরে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে আদালতে বিয়ে করেন। এরপর তারা স্থানীয় গার্মেন্টে চাকরি নিয়ে সংসার করছিলেন। পরের বছর তাদের মেয়ে রুবাইয়ার জন্ম হয়।
এদিকে আতোয়ারার বাবা আজিজার রহমান তাকে নাবালিকা সাজিয়ে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মিথ্যা অপহরণ মামলা দেন। এ মামলায় আদালত গত ১০ জানুয়ারি তার স্বামী রবিন ফকিরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে র্যাব-১২ বগুড়া স্পেশাল কোম্পানির সদস্যরা গত ২২ ফেব্রুয়ারি গোপনে খবর পেয়ে ওয়ারেন্টমূলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ডহুরগাঁও’র ভাড়া বাড়ি থেকে রবিন ফকিরকে গ্রেফতার করেন। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি জামিন চাইলে ওই আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
রবিনকে গ্রেফতারের পর থেকে তার মুক্তির জন্য শিশু কন্যাকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আতোয়ারা খাতুন। সোমবার তিনি বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
আতোয়ারা খাতুন বলেন, তিনি ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। কিন্তু তার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা মিথ্যাচার করে তাকে নাবালিকা সাজিয়ে মামলা করেছেন। আদালত তার স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। পরিবার থেকে আজও বলা হচ্ছে দরিদ্র রবিন ফকিরকে তালাক দিলে তাকে বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া হবে। তাকে অন্যত্র ধনী পরিবারে আবারও বিয়ে দেওয়া হবে।
আতোয়ারা আরও বলেন, স্বামীকে খুব ভালোবাসি। আমি কখনও স্বামীকে ছেড়ে যাবো না। শিশুকন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রুবাইয়াকে তার বাবার স্নেহ-ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।