বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ১ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার)। ১৯৭৮ সালের এ দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ওই দল গঠন করেন।
বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ের পথপরিক্রমায় বিএনপি এখন দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল।
৪৩ বছরে পা দেওয়া এ দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৬ আগস্ট দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সকাল ৬টায় বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়গুলো দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়ার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পণ। দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়ার সমাধিতে ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
এছাড়া এ দিন বিএনপি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা বিকেল ৩টা ৩০মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলের জৈষ্ঠ্য নেতারাসহ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা অংশ নেবেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
রিজভী আহমেদ বলেন, সারাদেশের ইউনিটগুলোকে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ইউনিটগুলো নিজেদের সুবিধাজনক সময় অনুযায়ী ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা করতে পারে।
দলটি প্রতিষ্ঠার পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২শ আসন লাভ করে। এ দলের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থানকালে সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপের হামলায় জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর দলের হাল ধরেন তার পত্নী খালেদা জিয়া। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে ১০ বছর দেশ চালায় দলটি। ২০০৬ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বিএনপিকে কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। ছাড়া পেয়ে তারেক রহমান লন্ডনে যান চিকিৎসা নিতে। এখনো তিনি নির্বাসিত। খালেদা জিয়া সেই যাত্রা মুক্তি পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও কারাবন্দি হন। ২৫ মাস কারাগারে থেকে মুক্তি পেলেও বাসায় অবস্থান করছেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতা ও সরকারের শর্তের কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আপাতত তাকে দেখা যাবে না।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বাণীতে বলেন, আজ থেকে ৪২ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এদেশের মানুষকে একদলীয় দুঃশাসনের অন্ধকার যুগ থেকে রক্ষার জন্য বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। আমি তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বারবার দেশ ও গণতন্ত্রের সঙ্কটকালে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে জুলুম-নির্যাতনকে সহ্য করেও দুর্বার আন্দোলনে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন আমি সেই অদম্য সাহসের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
এ দিনে দলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত যেসব নেতারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতিও জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিএনপিকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে এখন পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মীরা আত্মদান করেছেন তাদের প্রতিও জানাই আমার অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।
মঙ্গলবার বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
মহাসচিব বলেন, বিএনপির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলীয় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দলকে আরও গতিশীল করার ক্ষেত্রে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমান দুঃসময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশ আজ দুঃশাসন কবলিত। এর ওপর করোনা মহামারির আক্রমণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে দেশের মানুষ। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষের নিত্যসঙ্গী। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে রাখার চেষ্টায় মরিয়া। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ দিনে আমি দেশবাসীকে বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।