বিমানের টিকিটের কৃত্রিম সংকট চলছে কয়েক দিন ধরে। এ নিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিমানের সেলস অফিসে যাত্রীরা বিক্ষোভ করছেন।
গতকাল সোমবারও তিনটি বিমানবন্দরে যাত্রীরা টিকিটপ্রাপ্তির জন্য জড়ো হন। সেলস অফিসে টিকিট সংকট থাকলেও কিছু ট্রাভেল এজেন্সি ও ব্রোকার চড়া দামে বিক্রি করছে বিমানের টিকিট। মধ্যপ্রাচ্যগামী যাত্রীদের টিকিটের গড় দাম ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা হলেও সেই টিকিট বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকায়।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের বিমান টিকিটপ্রাপ্তিতে জটিলতা, হয়রানি ও অব্যবস্থাপনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে প্রবাসীদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কর্মস্থলে যেতে টিকিটপ্রাপ্তি নিশ্চিত এবং প্রয়োজনে বিমানে বিশেষ ফ্লাইটের চালুর দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে (ক্যাব)।
জানা যায়, করোনাভাইরাসে লকডাউন খোলার পর মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কর্মস্থল ও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু হলে আবার ফেরত যেতে টিকিটের চাহিদা বাড়ায় বিমানের টিকিট নিয়ে কৃত্রিম সংকট শুরু করে একটি মহল।
বাংলাদেশ থেকে বিমানের বিভিন্ন রুটে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিমান চলাচল শুরু হয়। এ অবস্থায় অধিকসংখ্যক যাত্রী একই সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরার সুযোগ নিতে মূলত এ সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। যদিও বিমান তা স্বীকার করছে না। যদিও বর্ধিত দামে এবং রিটার্ন টিকিট কিনেও তা পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।
টিকিট সংকট নিয়ে বিদেশগামীদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বিমান জানিয়েছে, দুবাই ও আবুধাবি রুটে মহামারির আগে যাদের টিকিট কেনা ছিল, এখন তাদের টিকিট আগে দেওয়া হচ্ছে বলে নতুন টিকিটপ্রত্যাশীরা তা শুরুতে পাচ্ছেন না। বিমানের টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ এবং চট্টগ্রামে ভাঙচুরের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ ব্যাখ্যা দেয়।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, ঢাকা-দুবাই ও ঢাকা-আবুধাবি রুটে যেসব যাত্রী আগে ফিরতি টিকিট করার পরও কোভিড-১৯-এর কারণে তখন যেতে পারেননি, আগে তাদের টিকিট দেওয়া হবে। ফিরতি টিকিট রি-ইস্যু করা সম্পন্ন হওয়ার পরই কেবল নতুন করে টিকিট বিক্রি শুরু করা হবে। আগে যারা টিকিট কিনেছেন, তাদের অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া আবুধাবি রুটের সেপ্টেম্বর মাসের শিডিউল আবুধাবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদন হওয়া মাত্রই সেপ্টেম্বর মাসের টিকিট বিক্রি শুরু করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে বলে আসনসংখ্যা কমে যাওয়াও টিকিট সংকটের কারণ বলে জানিয়েছে বিমান। বেবিচক বলছে, মহামারিকালে এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতার ৭৫ শতাংশের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের বসার ক্ষেত্রে দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
বিমান টিকিট সংকটের কথা বললেও কালোবাজারিতে বেশি দামে টিকিট বিক্রি হওয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। তাদের দাবি, বিমানের টিকিট বিক্রি নিয়ে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ থাকার পরও তা বন্ধে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হয়নি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের।
অনেকে বলছেন, বিমানের টিকিট নিয়ে রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের ভোগান্তি জাতীয় অর্থনীতির জন্য শুভকর নয় এবং প্রবাসীদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান না করলে জনমনে ক্ষোভ বাড়তে পারে। ক্যাব নেতারা বলছেন, প্রবাসীদের নির্দিষ্ট সময়ে তাদের কর্মস্থলে ফেরত যেতে প্রয়োজনে বিশেষ বিমান ফ্লাইট চালু, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের সুবিধা নিশ্চিতসহ টিকিটপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।
জানা গেছে, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের অনেকে দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ দামে টিকিট কিনে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। এই সুযোগে একটি সিন্ডিকেট বাড়িয়ে দিচ্ছে টিকিটের দাম। এদের সঙ্গে বিমানের মার্কেটিং বিভাগের একটি অসাদু চক্র জড়িত। কোনো যাত্রী টিকিটের জন্য বিমানের অফিসগুলোয় গেলে তাকে বলা হচ্ছে টিকিট নেই। একই সঙ্গে তারা জানিয়ে দিচ্ছে কোন এজেন্সির কাছে কোন এয়ারলাইনসের টিকিট পাওয়া যাবে। এ অবস্থায় অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে ওইসব স্থানে গিয়ে চড়া দামে টিকিট কিনছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইন যাওয়ার জন্য ৪০ হাজার টাকার টিকিট ১ লাখ ৪০ হাজারেও মিলছে না। একইভাবে অন্যান্য গন্তব্যের বিমান টিকিটের দামও চড়া। তাদের অভিযোগ ‘আগে যেসব রুটের টিকিটের দাম ৬০ হাজার টাকা, এখন সেটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।’
গতকালও বিমানের মতিঝিল, ফার্মগেট ধানমন্ডি ও হজ ক্যাম্প কার্যালয়ে ছিল টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও সিলেট অফিসেও টিকিটের জন্য চলছে হাহাকার।
টিকিট সংকটের বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে দুই হাজার যাত্রীকে টিকিট দেওয়া নিয়ে তিনি বেশি চিন্তিত। কারণ এই টিকিটগুলো আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব যাত্রী যেতে পারেননি। এখন তাদের আগে টিকিট দিতে হচ্ছে।
যেহেতু আগের যাত্রীরা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন, এ কারণে নতুন যাত্রীরা টিকিট পাচ্ছেন না। এ কারণে টিকিটের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। কালোবাজারিতে টিকিট বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান।