চাকরি জীবনের শুরুতে প্রতারণার অভিযোগের মুখে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের এক শিক্ষানবিশ নারী ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩ এর নাম ভাঙিয়ে তিনি অর্থ সংগ্রহ করে তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ এনেছেন খোদ নিজের ব্যাচমেটরা।
বিষয়টি বিভাগীয় তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত আবেদন দিয়েছেন তারা। এ ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় জনপ্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এভাবে একজোট হয়ে প্রকাশ্যে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনার ঘটনা মনে করছেন জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (প্রশিক্ষণরত) নিশাত ফারাবীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদা উত্তোলন করার অভিযোগ আনেন তার ব্যাচমেটরা। ৩৮তম ব্যাচের পক্ষে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা এসএম আব্রাহাম লিংকন এ লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, নিশাত ফারাবী ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার পরিবার গ্রুপে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি, মোবাইল নম্বর, বিকাশ নম্বর ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। কখনো অসহায় শিক্ষার্থীদের সাহায্যের কথা বলে আবার কখনো ‘৩৩৩’ নম্বরে সাহায্যপ্রার্থীদের জন্য তহবিল গঠনের কথা বলে তিনি অর্থ সংগ্রহ করতেন। তিনি যে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহ করেছেন জাতীয় তথ্য বাতায়নে সেই নম্বর তার দাপ্তরিক নম্বর হিসেবে প্রকাশিত।
লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, সার্ভিসের বাইরেও তার পূর্ববর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনেকের কাছে নিশাত অর্থ সংগ্রহ করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। যা সিভিল সার্ভিসের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। শুধু মর্যাদা ক্ষুণ্ন নয়, এ ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য মোটেও নিরাপদ নয় বলে মনে করেন বিসিএস ৩৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা।
বিষয়টি তদন্তের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর আবেদন জানিয়েছেন তারা। লিখিত অভিযোগের সঙ্গে নিশাতকে টাকা দিয়েছেন এমন বেশকিছু কর্মকর্তার নাম, পদবি, সিলসহ তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুকে অর্থ আদায়সহ দোষ স্বীকার করে ব্যাচমেটদের সঙ্গে কথোপকথনের বেশকিছু স্ক্রিনশট জমা দেয়া হয়েছে। অভিযোগে উল্লিখিত যে কয়টি বিকাশ নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে একটি নিশাত ফারাবীর। বাকি দুইটি জনৈক মো. জাকির হোসেন ও ফারিয়া অবনীর নামে বিকাশে নিবন্ধিত।
সংযুক্ত তথ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিশাত ফারাবী তার বাবার হার্টের বাইপাস সার্জারির কথা বলে ব্যাচমেটদের কাছে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
বিষয়টি ব্যাচমেটরা তার স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারেন নিশাত ফারাবীর বাবার হার্টের কোনো অপারেশনই হয়নি। পরবর্তীতে নিশাত ফারাবীর বাবা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ব্যাচমেটদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পদায়নের পর জরুরি খাদ্য সহায়তা নম্বর ৩৩৩-তে কল করা ব্যক্তিদের সহায়তার কথা বলে ব্যাচমেটদের কাছ থেকে টাকা তোলেন নিশাত ফারাবী।
ফেসবুকে ব্যক্তিগত মেসেজে এক ব্যাচমেটকে তিনি লিখেছেন, ‘৩৩৩-তে কল করে যারা রিলিফ চায় আমরা তাদের জন্য পারসোনালি ফান্ড কালেক্ট করতেছি। গভর্নমেন্ট ফান্ড এনাফ না। অনেকে কল দেয়, অফিসে আসে। আমরা বেশি মানুষকে সহায়তা দেয়ার জন্য পারসোনাল ফান্ড রেইজ করতেছি। আমার দায়িত্ব পড়েছে।’
ব্যাচমেটরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, এ ধরনের কোনো ফান্ড সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন দাপ্তরিক বা ব্যক্তিগতভাবে গঠন করেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অর্থকষ্টে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তার কথা বলে সহকর্মীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন নিশাত ফারাবী। এসব অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার নিশাত ফারাবীর দাপ্তরিক ফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ব্যাচমেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্ভিস ৩৮ ব্যাচের পক্ষে আব্রাহাম লিংকন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ৩৮তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। এতে আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি কোন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত আমাদের জানা নেই। তাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছি আমরা।