গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্য চলছে। ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের জন্য ভারত দায়ী। ভারত যদি বাংলাদেশের অভিন্ন নদীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না দেয়, তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে চীনের সঙ্গে তিস্তার চুক্তি করা। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কী কী চুক্তি রয়েছে সেগুলো প্রকাশ করতে হবে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে যুব অধিকার পরিষ আয়োজিত ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্য বিরোধী জাতীয় যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি মোড়ো এসে শেষ করে। যুব সমাবেশে বিভিন্ন যুব সংগঠনের জাতীয় নেতৃবৃন্দ সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
নুরুল হক নুর বলেন, আওয়ামী লীগের মতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যবহার করতে পারবে না তাই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। পরিকল্পিতভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আমরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন তদন্ত করে। বাংলাদেশের কোনো সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেনি, যা ঘটেছে সেগুলো রাজনৈতিক ঘটনা।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে বলবো বিএসএফ একজনকে গুলি করলে আপনারা দুই জনকে গুলি করবেন। কোনো প্রকার ছাড় দেওয়ার সুযোগ নাই।
নুর আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ভাষা বুঝতে পারছে না। তারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে তারা তাদের চায়ের আড্ডার লোকদের নিয়ে সরকার গঠন করছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন না করে রাজনৈতিক দলগুলোর কথা না শুনে তারা তাদের মতো কাজ করছে। আমরা আগেও বলেছি আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। তারা যদি সবার কথা না শুনে নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী কিংবা সার্কেলের কথা শুনে তাহলে তো সবাই সরকারকে সন্দেহ করবেই। উপদেষ্টাদের বুঝতে হবে তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা কী, জনগণের পালস না বুঝে কাজ করলে জনগণ তো সরকারের বিপক্ষে যাবে। বিগত সময়ে আমরা দেখে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা তাদের নিজেদের কথা চিন্তা করেছে, নিজেদের দলের কথা চিন্তা করেছে। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারও জরুরি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ডাকসুতে আমাদের উপর কুখ্যাত সাদ্দাম ও সনজিতের নেতৃত্বে এদেশীয় ‘র’ এর এজেন্টরা হামলা করে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানালে আমরা প্রতিবাদ করি। তখন আমাদের ৬৪ জন সহযোদ্ধাকে গ্রেফতার করা হয়। এদেশের রাজপথে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই আমরাই শুরু করি।
তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা টানা লড়াই করেছি। ২০২৪ সালে আমাদের সভাপতি নুরুল হক নুর আটক হন। অসংখ্য সহযোদ্ধা ত্যাগ শিকার করেছেন। গণঅভ্যুত্থানের বীজ ২০১৮ সালো আমরা বপন করেছি। কিন্তু যে সরকার গঠিত হলো, এখানে সকল বিপ্লবীদের প্রতিনিধি কোথায়? ’৭১ এর পরে যেভাবে একপাক্ষিক সরকার গঠিত হয়েছিলো। ঠিক এবারও তাই হয়েছে। বিপ্লব বেহাত হয়ে গেছে। অন্যথায় শহিদের তালিকা কোথায়, শহিদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ কোথায়, আহতদের কেন সুচিকিৎসা হচ্ছে না? কেন শেখ পরিবার ও আওয়ামী হাইকমান্ডের কেউ গ্রেফতার হচ্ছে না? বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদসহ সকল দল আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে তাদের অবস্থান ক্লিয়ার করেছে। কিন্তু কেন সরকার আ.লীগকে নিষিদ্ধ করছে না? আমাদের স্পষ্ট কথা, গণহত্যার বিচারের আগে নামে-বেনামে, ডামি-মামি, স্বতন্ত্র কোনভাবেই আ.লীগ, জাতীয় পার্টি, ১৪ দলের প্রেতাত্মাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার থাকার জন্য ভারতকে খুশি করতে যে অসম চুক্তি করেছেন, তা অনতিবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ভারতের সঙ্গে আমরা বৈরিতা চাই না, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক হবে নায্যতা ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে। ভারত তার আগ্রাসন ও অপপ্রচার বন্ধ না করলে বাংলাদেশের জনগণ ভারতের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বিষয়ে ভারতের সঙ্গে কোনো আপোস নয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সঞ্চালনা করেন সহ সভাপতি রাহুল ইসলাম, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, এডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ হাসান আল মামুন, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, সহ সভাপতি শাকিল আহমেদ তিয়াস, হোসাইন নুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাসেল মুন, অর্থ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, পেশাজীবি অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খালিদ হাসান, মহানগর দক্ষিণ গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।