হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হককে মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত যে নাশকতার মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড দেয়া হয়েছে, ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় কাজে বাধা, মোবাইল চুরি, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ডলার চুরি এবং আরও কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
একই মামলায় আসামি করা হয়েছে মাওলানা মামুনুল হকের ভাই জামিয়া রহমানিয়া মাদরাসার মুহতামিম মাহফুজুল হকসহ ওই মাদরাসার ৭০-৮০ জন ছাত্রকে।
গত বছরের ৭ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলার (নং-২৫) বাদী জি এম আলমগীর শাহীনের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়, মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হকের নির্দেশে ৭০-৮০ জন ছাত্র বাদীসহ অন্যান্যদের মসজিদ থেকে বের করে দেয়। বাদীকে মারধর করে বাদীর সঙ্গে থাকা ১টি স্যামসাং মোবাইল, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের ১টি ডেবিট কার্ড ও ১টি মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে যায় আসামিরা। বাদীকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় তারা।
আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) মামুনুল হককে রাজধানী মোহাম্মদপুর থানার মামলায় আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সাজেদুল হক। এ সময় তিনি আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ওই আবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনে তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৬ মার্চ মোহাম্মদপুর সাত মসজিদ এলাকায় সাত গম্বুজ মসজিদে রাত সাড়ে ৮টায় আসামি মাওলানা মো. মামুনুল হক ও তার ভাই মুহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার ছাত্র আসামি ওমর এবং ওসমান বাদী ও তার সঙ্গে থাকা অন্যদের আমল করতে নিষেধ করে। তাদের ধর্মীয় কাজে আঘাত করে ও মসজিদ হতে বের হয়ে যেতে বলে আসামিরা।
বাদী প্রতিবাদ করলে আসামি মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও তার ভাই মুহতামিম মাহফুজুল হক নির্দেশে মাদরাসার আরও ৭০-৮০ জন ছাত্র বের হয়ে বাদীকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর জখম করে। আসামি ওমর ও ওসমান তাদের হাতের লাঠি দিয়ে বাদীকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আসামিদের লাঠির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে মসজিদের ভেতরে শুয়ে পড়েন বাদী। এরপর আসামিরা বাদীর কাছে থাকা ১টি স্যামসাং মোবাইল, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ডলার ও ব্র্যাক ব্যাংকের ১টি ডেবিট কার্ডসহ বাদীর একটি মানিব্যাগ নিয়ে যায়। বাদীকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয় আসামিরা।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামির (মামুনুল হক) বিরুদ্ধে মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়। আসামি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে ধর্মভীরু মুসলমান ও মাদরাসার ছাত্রদের উস্কানি দেয়। আসামির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও অন্যান্য আসামিদের চেনেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে মামলার ঘটনায় জড়িত অপর আসামিদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ ও তাদের গ্রেফতারসহ চোরাই মাল উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে এবং অপর আসামিদেররে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে আসামী মামুনুল হকের ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৮ মিনিটে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাকে আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়। সেখান থেকে এজলাসে নেওয়া হয়। পরে শুনানি শেষে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটের দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
মারধর, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতে গুরুতর জখম, চুরি, হুমকি ও ধর্মীয় কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে গোলযোগের অভিযোগ এনে স্থানীয় এক ব্যক্তি মোহাম্মদপুর থানায় মামুনুলের বিরুদ্ধে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে রোববার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত এক মাস ধরে ব্যক্তিগত জীবন আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতের আন্দোলনসহ নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন মাওলানা মামুনুল হক।
নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সহিংসতায় দেশে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এসব সহিংসতার ঘটনায় সারাদেশে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে। মামুনুলকে এসব ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা হিসেবে মনে করছে পুলিশ।
এছাড়াও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা যায়, ২৬ মার্চ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে আরওস ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ২ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি করেন।