কিডনি আমাদের শরীরের সবচেয়ে জরুরি একটা অঙ্গ। যা অচল হয়ে পড়লে আমাদের বাঁচার সম্ভাবনাগুলোও ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকে এবং একসময় শেষ হয়ে যায়। এই কিডনিরই রয়েছে এমন এমন অসুখ, যা আমরা সহজে বুঝতে পারি না। যখন বোঝা যায়, তখন দেখা যায় সময় অনেক পেরিয়ে গিয়েছে।
আজকাল প্রায়ই পরিচিত অপরিচিত সবার কাছ থেকে কিডনিতে স্টোনের কথা শোনা যায়। এই স্টোন সময়ে অপারেশন করালে আমাদের বাঁচার সুযোগ থাকে। আর সময়ে বুঝতে না পারলে এই কিডনি স্টোনই ক্যানসারের রূপ ধারণ করে।
কিডনিতে পাথর জমার কারণ
* শরীরে পানির স্বল্পতা। কম পানি খাওয়া।
* বারবার কিডনিতে ইনফেকশন হওয়া এবং এর জন্য যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা।
* অত্যধিক পরিমাণে দুধ, পনির বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস।
* শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রাতিরিক্ত আধিক্য।
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণ
১) কিডনিতে পাথর হলে সবার আগে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হতে শুরু করে। বিশেষ করে তলপেটে অসম্ভব যন্ত্রনা দেখা দেয়।
২) যদি কিডনির পাথরের আকার বড় হয়ে যায়, তাহলে আমাদের প্রস্রাব করার সময়েও যন্ত্রনা হয়।
৩) কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হল প্রস্রাবের অস্বাভাবিক রং। গোলাপি বা লাল রঙের প্রস্রাব হতে শুরু করে। কখনও কখনও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তও বেরোতে পারে।
৪) তলপেট এবং পাঁজরে ব্যাথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘোরা এবং বমিও শুরু হয়ে যায় কিডনিতে পাথর হলে। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত্।
৫) যখন পাথরের আকার খুব বড় হয়ে যায়, তখন আমাদের প্রস্রাবের পরিমানও খুব কম হয়ে যায়।
৬) কিডনির অবস্থানে ‘কোমরের পিছন দিকে’ ব্যথা। এই ব্যথা তীব্র তবে সাধারণত খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। ব্যথা কিডনির অবস্থান থেকে তলপেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কিডনির অবস্থানে ব্যথা এবং রক্তবর্ণের প্রস্রাব হলে চিকিৎসকরা সাধারণত দুটো সম্ভাবনার কথা চিন্তা করেন। একটি হলো কিডনিতে পাথর অন্যটি ইনফেকশন। তাই কিডনির এক্সরে, আলট্রা সনোগ্রাম এবং প্রস্রাবের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি আর যথাযথ ওষুধ খেলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র উপায়।
সতর্কতা
* কখনও প্রস্রাব আটকে বা চেপে রাখবেন না। প্রস্রাবের বেগ এলে চেষ্টা করবেন সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব করার।
* কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি এড়াতে হলে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
* বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খান।
* দুধ, পনির বা দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত মাত্রায় না খাওয়াই ভালো।