বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার জামিন মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন। বেগম জিয়ার পক্ষে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। উল্লেখ্য, দুটি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ ‘র ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় ২৫ মাস তিনি কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। এ বছরের ২৫ মার্চ বেগম জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বিশেষ বিবেচনায় জামিন দেওয়া হয়। এই জামিনের শর্ত ছিল তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। আর এই জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর। এই কারণেই বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হয়েছে। নতুন আবেদনে দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রথমত, বেগম জিয়ার পক্ষ থেকে করা এই আবেদনে তার স্থায়ী জামিনের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতির কথা এই আবেদনে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, আবেদনটি নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, আবেদনটি সোমবার দিন নিরীক্ষা করা হবে এবং এই ব্যাপারে মতামত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে সরকারের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের এই জামিনের শর্ত এবং খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে দেন দরবার চলছে। এই দেন দরবার চূড়ান্ত হলেও বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি হতে পারে বলে একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে সমস্ত বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে তারমধ্যে রয়েছে;
স্থায়ী জামিন অসম্ভব ব্যাপার
বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। কাজেই তার পক্ষে তাকে স্থায়ী জামিন দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে সরকারের দায়িত্বশীল মহল। তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যই জামিন দেওয়া হবে। কতটা সময়ের জন্য- এটা আলাপ আলোচনা করে নির্দিষ্ট করা হবে বা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর পর তাকে জামিনের আবেদন করতে হবে এবং তাকে জামিনের আবেদন বৃদ্ধি করতে হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, যদি তার জামিন শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, আবারো ছয় মাসের জন্য তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে। এটি হবে জামিনের প্রথম শর্ত।
খালেদা জিয়াকে অপরাধ স্বীকার করতে হবে
এই ধরণের জামিন হল সরকারের অনুকম্পা। কাজেই এই ধরণের জামিনের আবেদন করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই তার দোষ স্বীকার করতে হবে এবং অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। যদিও আইনজীবীরা বলছেন, এই ধরণের আবেদনই হচ্ছে এক ধরণের পরোক্ষ ক্ষমা চাওয়া বা দোষ স্বীকার করা এবং দোষের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কিন্তু সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মনে করছেন যে, আবেদনের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ভাবে তার অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে শেষ পর্যন্ত এই শর্তটি থাকবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
রাজনীতি ছাড়তে হবে
বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি তখনই আমলে আনা হবে যখন তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিবে। রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছেন, বেগম জিয়ার আবেদনেই বলা হয়েছে তিনি অসুস্থ এবং তার অসুস্থতার মাত্রা অনেক বেশি। এই রকম পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসার জন্য যদি কারাজীবন ভোগ করতে না হয় বা তাকে যদি জামিন দিতে হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই রাজনীতিও ত্যাগ করতে হবে। এই ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এটি বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের ক্ষেত্রে একটি শর্ত হতে পারে বলে একাধিক লোক ইঙ্গিত দিয়েছে।
রাজনৈতিক বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান না করা
বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হতে পারে যে, তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে কোন রকম রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতি দিবেন না। বরং, তিনি এই সময়ে গত ছয় মাস যেভাবে ছিলেন, ঠিক একইভাবে তার চিকিৎসার জন্যই সময় ব্যয় করবেন। কোন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই ইতিবাচক মনোভাব দেখা গেছে। কারণ এর আগে যে ছয় মাসের জামিন দেওয়া হয়েছে, তাতে গোপন শর্ত হিসেবে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হওয়ার বিষয়টি ছিল বলে একাধিক সূত্রে আভাস দিয়েছেন। কাজেই বেগম জিয়া যদি আবার জামিন পান, তাহলে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারকে অবহিত করতে হবে
বেগম খালেদা জিয়ার যদি শেষ পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি হয় এবং তিনি যদি বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পান, তবে বেগম জিয়াকে অবশ্যই তার চিকিৎসার বিষয়গুলো সরকারকে অবহিত করতে হবে। প্রতি মাসে একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে দিতে হবে।
সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বেগম খালেদা শেষ পর্যন্ত স্থায়ী জামিন পাবে কিনা, তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি হবে কিনা- পুরোপুরিভাবে নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। বেগম জিয়ার পরিবারের সূত্রগুলো বলছে, তারা খুব শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন।