রংপুর নগরীতে যৌতুকের টাকার জন্য হালিমা পারভীন নামে এক গৃহবধূকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে গৃহবন্দি করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে এ নির্যাতন চালায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে খবর পেয়ে পুলিশ বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) মধ্যরাতে নগরীর ধাপ পুলিশফাঁড়ি-সংলগ্ন শ্যামলী লেন এলাকার অনুপম হাউজে নির্যাতনের এ ঘটনাটি ঘটে। বর্তমানে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবার থেকে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
অভিযোগ উঠেছে, ২০০০ সালে নগরীর ধাপ শ্যামলী লেন এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বাবুর সঙ্গে পীরগঞ্জের হালিমা পারভীনের বিয়ে হয়। এরপর থেকে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওই গৃহবধূকে বিভিন্ন সময়ে কারণ-অকারণে তার বাবার বাড়ি থেকে ২০ লাখ টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। স্বামী ও সংসারের কথা চিন্তা করে পারভীন তার বাবার পরিবার থেকে দফায় দফায় কয়েক লাখ টাকা এনে স্বামীকে দেন। কিন্তু বছরখানেক পর থেকে আবার একই ঘটনা ঘটতে থাকে। চলে পারভীনের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন। এভাবেই প্রায় ২২ বছর ধরে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে আসছিলেন হালিমা পারভীন।
সবশেষ গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) রাতে ব্যবসার পুঁজি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অজুহাতে এবার ১০ লাখ টাকা দাবি করেন আলমগীর ও তার পরিবার। এতে আপত্তি জানালে পারভীনের ওপর সবাই মিলে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয় এবং তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হালিমা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শান্তির আশায় এতদিন ধরে সংসার করে আসছি। কিন্তু আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের অমানবিকতা এবং নির্যাতন মোটেও বন্ধ হয়নি। যৌতুকের জন্য প্রায় সময়ই তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। বুধবার রাতেও আমাকে প্রচণ্ডভাবে শারীরিক নির্যাতন করে এবং বাসায় বন্দি করে রাখে। উপায় না পেয়ে আমি মোবাইলে আমার ভাই-বোনকে বিষয়টি অবগত করি। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।
এ ব্যাপারে নগরীর ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মজনু মিয়া জানান, আমরা ওই গৃহবধূর পরিবারের অভিযোগ পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছি। বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে পারভীনের স্বামী আলমগীর হোসেন বাবুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, এটা সাংসারিক বিষয়। এ অভিযোগ নিয়ে আমার কিছুই বলা নেই।