শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে নতুন একটি সিনেমার শুটিং চলছে। শুটিং টিম গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার গারো পাহাড়ি বিভিন্ন লোকেশনে সিনেমাটির দৃশ্য ধারণ করছেন। আর এরইমধ্যে কয়েকটি লোকেশনে বন্যহাতি হানা চালিয়েছে। বনের মধ্যে যেখানে হাতির পথ, সেই এলাকায় সিনেমার শুটিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক সমালোচনা হচ্ছে, পাশাপাশি প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা।
জানাযায়, নতুন ওই সিনেমায় অভিনয় করছেন আব্দুন নূর সজল ও বুবলী। সিনেমার নাম ‘শাপলা শালুক’। নতুন এই সিনেমার শুটিং এর জন্য শেরপুরের গারো পাহাড়কে মনোনীত করা হয়। সেজন্য একটি টিম বর্তমানে বিভিন্ন স্পষ্টে দৃশ্য ধারন করছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই পাহাড়ি অঞ্চলে চলছে সিনেমাটির শুটিং।
অভিনেতা সজল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখানকার হাতি সম্পর্কে লিখেন, বন্য হাতির আক্রমণে শুটিং সেট এর যা অবস্থা। জানালা ভেঙে শেষ।
গারো পাহাড়ের সিনেমাটির শুটিংয়ের তীব্র সমালোচনা করে অভিনেত্রী জয়া আহসান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, এই আরেক উপদ্রব বনের ভিতর। বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মন চাইলেই লাইট ক্যামেরা একশন শুরু করা যায়? মাইকের শব্দ, শ্যুটিং টিমের বর্জ্য, গান-বাজনা এগুলো কি এলাউ করা ঠিক হবে এরকম একটা সেন্সিটিভ জায়গায়?
ছবিটির পরিচালক লাজুক গণমাধ্যমকে জানান, তারা বনে শুটিং করছেন না। পার্শ্ববর্তী গ্রামে পেতেছেন ‘শাপলা শালুক’ -এর সেট। ভুল তথ্যে দিশাহারা না হয়ে খোঁজ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘উনি (জয়া আহসান) লিখেছেন আমরা বনের ভেতর শুটিং করেছি। এটা একেবারেই ভুল। আমরা গ্রামে শুটিং করছি। সিনেমাটির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাইছি। সেজন্যই সুন্দর একটি গ্রাম বেছে নিয়েছি। আমরা বনে হাতির কাছে যাইনি। বরং হাতি আমাদের এখানে এসেছে। কেননা বনে খাদ্য সংকট দেখা দিলে হাতি গ্রামে আক্রমণ করে। সেরকমই হয়েছে। আর উনি না জেনে লিখে দিলেন, বনের ভেতর শুটিং করেছি। ওনার এই কথায় আমি, শবনম বুবলী, সজলসহ সবাই অবাক হয়েছি। এটা নিয়েই বলাবলি করছিলাম। আর একটা কথা, জয়া আহসান একাই শুধু অ্যানিমেল লাভার নন, পশুপাখির প্রতি আমাদেরও ভালোবাসা আছে।’
ডিপ ইকোলজি এবং স্নেক রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, এমন একটা বনের ভিতর কিভাবে তারা শুটিং করছে। শুটিংয়ের শব্দে এবং শুটিং দেখতে আসা লোকজনের কারণে বনের অনেক কীটপতঙ্গ, সাপসহ ছোট বড় অনেক প্রাণী ভয়ে অন্যত্র মুভ করতে পারে। তাছাড়া মারাও যেতে পারে। এবং এসব কারণে অনেক প্রাণী ট্রমায় ভুগবে। এজন্য এখানে শুটিং বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।
রিচার্স অ্যান্ড কনজারভেশন অব এলিফ্যান্ট বাংলাদেশের সভাপতি আসিফুজ্জামান পৃথিল বলেন, দেশের অন্যান্য বনের তুলনায় গারো পাহাড়ের শেরপুর জেলায় হাতির দলের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে রাতে এবং দিনে প্রায় সবসময় হাতির দলগুলো ঘুরাফেরা করে, খাবার খোঁজে। একদিকে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোকজন দলগুলোকে ডিস্টার্ব করে। আর তার চেয়েও মারাত্মক হুমকি হচ্ছে, গভীর বনে কিভাবে শুটিং করা হচ্ছে। এখানে আসা লোকজন, শব্দ সবকিছু মিলিয়ে স্থানীয় হাতিগুলোকে উত্যক্ত করা হচ্ছে। দ্রুত এখানে এসব উত্যক্ত বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী বলেন, সেখানে সিনেমার শুটিং হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়েছি। আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে যাবো।