সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ নিজের আত্মীয়স্বজনকে তুষ্ট করে দরিদ্র মানুষকে ঠকিয়েছেন। মন্ত্রীর মেয়ে, জামাতা, মন্ত্রীর স্ত্রীর ভাতিজারাসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজন পেয়েছেন গরিবের জন্য সরকারি বরাদ্দ অর্থ সহায়তা। দুস্থ নন, শুধু দলীয় পরিচয়ে এমন শতাধিক ব্যক্তি পেয়েছেন অনুদানের মোটা অঙ্কের টাকা।
সমাজকল্যাণ পরিষদের তথ্য তালিকা থেকে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বোন নূরন নাহার আনোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক। বিশেষ অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। একই তালিকায় নূরন নাহারের মেয়ের জামাই মোহাম্মদ জাভেদ চৌধুরীরও নাম রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে তাদের। কালীগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনশ্বর গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাতিজা গোলাম মোস্তফা, আবু সাঈদ খান, আবু জাফর খান এবং স্ত্রীর আরেক ভাতিজা গোলাম ফারুকের পরিবারের ১০ জন সদস্য পেয়েছেন দুস্থদের সহায়তার টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছরে অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকাতেও কালীগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনশ্বর গ্রামে নুরুজ্জামান আহমেদের স্ত্রীর ভাতিজা গোলাম মোস্তফা, গোলাম ফারুক, আবু সাঈদ খান, আবু জাফর খানসহ তাদের পরিবারের ১৬ ব্যক্তির নাম রয়েছে। এ অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা পেয়েছেন তারা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও গোলাম ফারুকদের পরিবারের ১০ সদস্য আবার সহায়তার টাকা পেয়েছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লিটন মিয়ার শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন, তার শাশুড়ি, স্ত্রী ও স্ত্রীর চার বোন গত তিন অর্থবছরে প্রায় ২ লাখ টাকা পেয়েছেন। যদিও লিটনের শ্বশুর কালীগঞ্জের দক্ষিণ দলগ্রামে মোহাম্মদ হোসেন একজন সচ্ছল কৃষক।
কালীগঞ্জের গোপাল রায় গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ইনসানা বেগম ও তার স্বামী জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক মনজু আলী শেখ ২০২১-২২ অর্থবছরে দুবার করে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা পেয়েছেন। ওই তালিকায় দেখা গেছে, দুস্থ নন, শুধু দলীয় পরিচয়ে এমন শতাধিক ব্যক্তি অনুদান পেয়েছেন।
এ ছাড়া কালীগঞ্জের তুষভান্ডার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু তালেব আলবানী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রীর এপিএস মিজানুর রহমান মিজানের শ্বশুর। আবু তালেবসহ তার স্ত্রী মুসারত রেহেনা ও ছেলে ফুয়াদ হাসানের নাম আছে ২০২১-২২ অর্থবছরের অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকায়।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা গ্রামের আশিক বাবু বলেন, মন্ত্রীর এপিএস মিজানুর রহমানের চাচাতো ভাই। তার নামও আছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অনুপ্রাপ্তদের তালিকায়। আশিকের দাবি, এপিএস মিজান তার কাছ থেকে একটি মাদ্রাসার নিয়োগ বাবদ ৭ লাখ টাকা নেন। কিন্তু চাকরি না হলে অনুদানের দুটি চেক দিয়ে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।
আদিতমারীর মহিষখোঁচা ইউনিয়নের দেলজার রহমানের নামে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও তিনি সেই টাকা পাননি। দেলজারের দাবি, এপিএস মিজানুরের মামা সেকেন্দার আলী তাকে দিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংকে হিসাব খুলে নিয়েও টাকা দেননি। আরও অনেকেই বলেছেন, তালিকায় তাদের নাম থাকলেও টাকা পাননি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সদ্য বিদায়ী কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক তাদের টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা আত্মগোপনে গেছেন। ফলে অভিযোগের বিষয়ে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও তার এপিএসের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ ওই প্রতিষ্ঠান দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের চিকিৎসা, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ ও গৃহ মেরামত বাবদ সহায়তা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লালমনিরহাট জেলার ১ হাজার ৬৩১ জন ব্যক্তিকে ২ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার টাকা বিশেষ অনুদান দেওয়া হয়েছে।
নুরুজ্জামান আহমেদ ২০১৬ সালে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ সালে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি বাদ পড়েন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ-আদিতমারী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।