যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শামসুদ্দোহাকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঢাকার রাজাবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে গুলশান থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর শামসুদ্দোহাকে শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আনা হয়।
গ্রেফতার পুলিশ পরিদর্শক মো. শামসুদ্দোহা গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামের নুরুদ্দিন আহম্মেদের ছেলে। বর্তমানে তিনি ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার বিকন লেকসিটি, কনকর্ড টাওয়ারে বসবাস করতেন।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, পুলিশ পরিদর্শক শামসুদ্দোহা চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী ফারজানা খন্দকার তুলির দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় তাকে ঢাকার রাজাবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাদীর লোকজন গুলশান থানার সহযোগিতায় শামসুদ্দোহাকে আটক করে। পরে সংবাদ পেয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের গুলশান থানা থেকে তাকে ফরিদপুরে নিয়ে আসেন।
ওসি আরও জানান, পুলিশ পরিদর্শক শামসুদ্দোহার স্ত্রী ফাজানা খন্দকার তুলি বাদী হয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি, মারপিট ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন।
মামলার বাদী ফারজানা খন্দকার তুলির অভিযোগ, গত ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট পারিবারিকভাবে শামসুদ্দোহার সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত আমি ফরিদপুরে বাবার বাড়িতেই অবস্থান করি। পরবর্তীতে ওই বছরের নভেম্বর মাসে স্বামী তার চাকরির সুবাদে আমাকে যশোরে নিয়ে যান। সেখানে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করি। এর কয়েকদিন পর থেকেই স্বামীর আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করি।
তিনি আরও জানান, ওই সময় জানতে পারি তিনি অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আমি বাধা দেওয়ায় শুরু হয় নির্যাতন। বিভিন্ন সময় আমাকে মারপিট করতো শামসুদ্দোহা।
তুলি আরও জানান, এর কিছুদিন পর আমার কাছে তার প্রমোশনের জন্য ৭০ লাখ টাকা বাবার কাছ থেকে এনে দিতে বলে। আমি ওই সময় ১৫ লাখ টাকা এনে দিই, কিন্তু সে তাতে খুশি হয়নি। এরপর আরও নির্যাতন বাড়তে থাকে। প্রতিদিন নেশা করে এসে আমাকে মারপিট করতো। ওই সময় আমি সেখান থেকে বাবার বাড়ি চলে আসি। তখন আমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বাবার বাড়িতেই আমি ছেলে সন্তানের মা হই। সন্তানের বয়স এখন দুই বছর। সন্তানের মুখ পর্যন্ত এখনও দেখেনি সে।
তুলি দাবি করেন, বাবার বাড়িতে আসার পর আমার স্বামী ফোন দিয়ে বলে টাকা নিয়ে আসতে পারলে আসো, তা না হলে আসার দরকার নেই। নিরুপায় হয়ে আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার পুলিশ পরিদর্শক শামসুদ্দোহাকে আদালতে হাজির করা হবে।