উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় প্রবল জোয়ার, দমকা হাওয়া ও টানা ভারী বর্ষণের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে নিঝুম দ্বীপ, নলচিরা, তমরোদ্দি, বাংলাবাজার, চরচেঙ্গা, হরনী ও চানন্দী ইউনিয়নের বহু এলাকা পানির নিচে চলে গেছে।
একই সঙ্গে গত ৩৬ ঘণ্টা ধরে হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের সব ধরনের নৌ ও স্থল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে করে চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় অন্তত পাঁচ শতাধিক যাত্রী আটকা পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
নিম্নচাপের প্রভাবে বাড়ছে দুর্ভোগ
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। তীব্র জোয়ারের পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, রাস্তা-ঘাট পানির নিচে চলে গেছে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লাভলী বেগম জানান, “নামার বাজার ও নৌঘাট এলাকা পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। বন্দরটিলা বাজার পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। এতে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অধিকাংশ সড়ক এখনও পানির নিচে।”
আরও পড়ুন-
নোয়াখালীতে নিম্নচাপের প্রভাব, তলিয়ে গেছে নিঝুমদ্বীপ
তমরোদ্দি ঘাট এলাকার একজন শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, “ঘাট এলাকা এখনো পানিতে ডুবে রয়েছে। জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত।”
বিজ্ঞাপন
যাত্রীবাহী লঞ্চ আটকা, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা তাসরিফ-১ লঞ্চটি প্রবল বাতাসের কারণে ভোলার ইলিশা ঘাটে নোঙর করতে বাধ্য হয়। লঞ্চটিতে প্রায় ২০০ যাত্রী ছিল। এর আগে আরেকটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চেয়ারম্যান ঘাটে আটকে পড়া এক যাত্রী ইরাক জানান, ‘আমি গতরাতে ঢাকা থেকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি সব রুট বন্ধ। প্রায় ৫০০ জন যাত্রী আটকে আছি, কেউ খবর নিচ্ছে না।’
ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি
নলচিরা ও আফাজিয়া বাজারেও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় রুবেল মাঝি জানান, ‘জোয়ারে আমাদের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ছিদ্দিক সারেং নামের এক চা-দোকানদারের দোকান ভেসে গেছে। তার অন্তত ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
প্রশাসনের নজরদারি
নলচিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিষ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘সমুদ্র এখনো উত্তাল। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।’
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, ‘সৃষ্ট দুর্যোগে হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চেয়ারম্যান ঘাটে আটকে পড়া যাত্রীদের সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’