শিলংয়ে লাল সবুজ জার্সিতে হামজা চৌধুরীর অভিষেক হয়েছে আগেই। এবার শমিত সোম এবং ফাহমিদুল ইসলামের অপেক্ষা। হামজার সঙ্গে কানাডা ও ইতালি প্রবাসী এই দুই ফুটবলারকে নিয়েই সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য ২৬ জনের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। আগামীকাল শুরু হবে জাতীয় দলের ক্যাম্প। ওই ক্যাম্পের জন্য ইতিমধ্যে ঢাকায় পা রেখেছেন ফাহমিদুল ইসলাম। ২রা জুন আসবেন হামজা এবং ৪ঠা জুন শমিত সোম। ৪ঠা জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ১০ই জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবেন জামাল ভূঁইয়ারা।

গত ২৫শে মার্চ শিলংয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ‘সি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। মূলত ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে লেস্টার সিটির হয়ে এবং বতর্মানে ধারে শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার অসাধারন নৈপুণ্যেই এক পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে পেরেছিল লাল-সবুজরা। হামজার জন্যই ফুটবলের মরাগাঙ্গে জোয়ার এসেছে। ফের উন্মাদনা তৈরি হয়েছে ফুটবলাঙ্গনে। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে চারিদিকে। টিকিট পেতে সম্ভাব্য সব জায়গায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন দর্শকরা। হামজার সঙ্গে কানাডিয়ান প্রবাসী মিডফিল্ডার শমিত সোমের রসায়ন খুব কাজে দিতে পারে। তাইতো খুব দ্রুত কানাডায় সামিতের ক্লাব, ফিফা থেকে সব ক্লিয়ারেন্স নিয়ে লাল সবুজের মূল দলে টেনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে খেলা শমিত সোমের সব প্রক্রিয়া শেষ। সব ঠিক থাকলে জাতীয় স্টেডিয়ামেই প্রথমবারের মতো লাল-সবুজের জার্সিতে দেখা যাবে তাকে। এ ছাড়া ফিনিশিং লাইন শক্ত করতে ইতালি লীগে খেলা প্রবাসী ফরোয়ার্ড ফাহমিদুল ইসলামকেও ফের ঢাকায় এনেছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। গত মার্চে প্রাথমিক দলেও ছিলেন তিনি। কোচের ঘোষিত দলে ফরোয়ার্ড সুমন রেজা ফিরলেন অনেকদিন পর। ভারতের বিপক্ষে খেলা ২৩ জনের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন চন্দন রায়। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ক্যাম্পটাকে রোমাঞ্চকর বলেই মনে করছেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সামনেই রোমাঞ্চকর ক্যাম্প, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ম্যাচ খেলার জন্য আমরা মুখিয়ে। এর আগে অবশ্য ভুটানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ। ২৬ জনকে নিয়ে ক্যাম্পে আমরা আট থেকে দশটি সেশন ট্রেনিং করতে পারব।’ ফাহমিদুল ইসলামকে নিয়ে কোচ বলেন, ‘আমার বিশ্বাস দলের প্রয়োজন মেটানোর সক্ষমতা তার রয়েছে।’ শমিত সোমের বিষয়ে হাভিয়ের বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের মাঝমাঠ অবশ্যই দারুণ শক্তিশালী। শমিতের মান আছে, কিন্তু তার ব্যাপারে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কেননা, মানিয়ে নেওয়ার জন্য সে খুবই অল্প সময় পাচ্ছে। কানাডা থেকে লম্বা ভ্রমণ করে আসছে, এখানকার কন্ডিশন ভিন্ন, তবে আমরা তাকে নিয়ে ইতিবাচক।’ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী লিমিটেডের বিপক্ষে ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা মেরে ৬ মাস নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন। তবে সেই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় চার ম্যাচে। যে কারণে লীগের শেষ ম্যাচে খেলার সুযোগ পান তিনি। তিনিও আছেন কাবরেরার দলে। গুঞ্জন আছে, তার অনুরোধেই কমানো হয় সাদের শাস্তি। তবে তা গুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশ কোচ। সাদকে দলে রাখা নিয়ে কাবরেরা বলেন, ‘না আমি তার শাস্তি কমানোর অনুরোধ করিনি। সাদ চার ম্যাচ খেলেনি। তবে বাকি ম্যাচগুলোর সব কটিতে খেলেছে। সে বসুন্ধরার গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গতকালও সে ৯০ মিনিট খেলেছে। সে সব সময় নিজেকে খুব ফিট রেখেছে।’ সাদের শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন কাবরেরা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তাকে নিয়ে আমার কোনো সংশয় নেই। সে অবশ্যই ভুল করেছে এবং শাস্তি পাওয়াটা জরুরি ছিল। এরপর আবার মাঠে ফিরেছে সে।’ বরাবরের মতো এবারও কাবরেরার অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। কিন্তু মোদ্দা কথা হলো জামাল খেলার সুযোগ পাবেন কি? ভারতের বিপক্ষে দলে রাখলেও তাকে মাঠে নামাননি কাবরেরা। সিঙ্গাপুর-ভুটানের ম্যাচেও কি এর পুনরাবৃত্তি হবে? জবাবে কাবরেরা বলেন, ‘শুরুর একাদশে সে থাকবে কি না, সেটা পরে বলা যাবে। সে শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও অধিনায়ক। আর অধিনায়কেরা নেতাও হয়। মাঠের বাইরে রোজ অনেক কিছু ঘটে থাকে। আমরা ১৪-১৬ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকি। তাই মাঠ ও মাঠের বাইরেও তার ভূমিকা রয়েছে।’

২৬ সদস্যের বাংলাদেশ দল
গোলরক্ষক: মিতুল মারমা, মো. সুজন হোসেন, মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
ডিফেন্ডার: মো. শাকিল আহাদ তপু, মো. জাহিদ হাসান শান্ত, রহমত মিয়া, ঈসা ফয়সাল, তাজ উদ্দিন, তারিক কাজী, তপু বর্মণ, সাদ উদ্দিন।
মিডফিল্ডার: মো. হৃদয়, সৈয়দ শাহ কাজেম কিরমানী, সোহেল রানা, মজিবুর রহমান জনি, শেখ মোরসালিন, জামাল ভূঁইয়া, হামজা চৌধুরী, শমিত শোম।
ফরোয়ার্ড: ফাহমিদুল ইসলাম, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, রাকিব হোসেন, ইমন শাহরিয়ার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আল আমিন, সুমন রেজা।