ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে ঢুকে মো. রাসেল (৩৭) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাসেলের স্ত্রী হিরা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মামলায় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের নার্স ইলা সিকদার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দেবাশীষ নয়ন ও নার্স সুপারভাইজার জহুরা বেগমের নামে এবং অজ্ঞাত আরও দুই জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই পলাতক আসামিরা।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর স্বজনকে কুপিয়ে আহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
জেলা সিভিল সার্জন ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, তদন্ত কমিটিতে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মাসুদ আহম্মেদ আব্দুল্লাহকে সভাপতি ও ডেপুটি সিভিল সার্জন বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক মর্জিনা বেগম, হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. গনেষ আগরওয়ালা ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা করিম। আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাসেলকে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকাল সাড়ে ৩টা) সেখানে রাসেলের অপারেশন চলছিল।
রাসেলের ভাই জুয়েল জানান, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। এখনও অপারেশন চলছে। বুকে জখমের কারণে অপারেশন করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শহরের টেপাখোলা বৃন্দাবনের মোড় এলাকার বাসিন্দা রাসেল তার স্ত্রী হীরাকে নিয়ে কয়েকদিন ধরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডে ভর্তি। চিকিৎসক হীরার রক্ত পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেনারেল হাসপাতালের প্যাথালজি ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইরের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর জন্য সিস্টারকে সিরিঞ্জে রক্ত টেনে দিতে বলেন রাসেল।
দায়িত্বরত সিস্টার ইলা সিকদার রক্ত টেনে দেওয়া তার দায়িত্ব না জানিয়ে রাসেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এ সময় রাসেল ওই সিস্টারকে বলেন, সরকারি বেতন খান, রক্ত টানবেন না কেন? এরপর নার্স সুপারভাইজারের কাছে রাসেলের নমে নালিশ করেন সিস্টার। পরে রাসেল এ ঘটনার জন্য নার্স সুপারভাইজারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বের হন। এর পর পরই বাইরে থেকে আসা কয়েকজন তাকে ছুরিকাঘাত করে চলে যায়।
রাসেলের স্ত্রী হীরা জানান, তার শরীরের এক অংশ প্যারালাইজড। প্রতিদিন দুই বার রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলে দেরি হয়ে যাবে। তাই সিস্টারকে অনুরোধ করা হয়েছিল রক্ত টেনে দিতে। তিনি অভিযোগ করেন, সিস্টার ইলা সিকদারই কয়েকজনকে ডেকে এনে তার স্বামীকে কুপিয়েছে।