যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবার বাংলাদেশে ক্রেমলিন অর্থায়নে পরিচালিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই অভিযোগ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও।
আর শেখ হাসিনা টিউলিপ সিদ্দিকের খালা।
অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে, মিসেস সিদ্দিকের পক্ষে কীভাবে যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার পদে থাকা সম্ভব! সে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) তিনি। ব্রিটিশ করদাতাদের কোটি কোটি পাউন্ডের ওপর তার প্রভাব রয়েছে। তার কাজই যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেওয়া। অথচ তিনিই এখন বাংলাদেশের একটি প্রকল্পের বিপুল অর্থ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বলছেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি তদন্তাধীন। লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সম্পূর্ণ নির্দোষও হতে পারেন। তবে যুক্তরাজ্য ও টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য বিচক্ষণ ও সম্মানজনক পদক্ষেপ হবে পদত্যাগ করা, যতক্ষণ না তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। কারণ, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহের মেঘ অনিবার্যভাবে তার ওপর ঝুলে থাকবে।
তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। মিসেস সিদ্দিকি তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।
অবশ্য টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি কিয়ের স্টারমার।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেছেন, অর্থ আত্মসাতের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে কোনো ধরনের যুক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থেকে তিনি বিরত ছিলেন বলে দাবি করেছেন টিউলিপ।
এছাড়া অভিযোগগুলো পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও খালা শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেছে টিউলিপ সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।
মূলত টিউলিপ সিদ্দিকির বিরুদ্ধে অভিযোগটি আনেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
তিনি অভিযোগ করেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে মধ্যস্থতা এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের সমন্বয় করেছেন।
নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে, চুক্তিতে এই প্রকল্পের ব্যয় ১ বিলিয়ন পাউন্ড বাড়ানো হয়েছে, যার ৩০ শতাংশ অর্থ টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
ববি হাজ্জাজের অভিযোগ, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্য ও মন্ত্রীরা এই প্রকল্প থেকে মোট ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার (৫৯ হাজার কোটি টাকা) সরিয়েছেন।
এমন অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজ সামনে এসেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চুক্তি সই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। একটি অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিককে তার খালা শেখ হাসিনা এবং ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলতে দেখা গিয়েছিল। তখন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
অথচ আগে টিউলিপ দাবি করেছিলেন, এটি ছিল শুধুই একটি ‘পারিবারিক’ অনুষ্ঠান।
আদালতে দাখিল করা ববি হাজ্জাজের অভিযোগের দলিলের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন)। টিউলিপের মা শেখ রেহানা সিদ্দিক এবং পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন এই তদন্তের মধ্যে। তবে এই তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে দুদকের এখনও কোনো যোগাযোগ হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে মিসেস সিদ্দিককে দায়িত্ব দেওয়ার আগে তার ওপর কী যথাযথ অনুসন্ধান করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী?
বিষয়টিকে ঘিরে আবারও স্যার কিয়ারের বিচারবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। উচ্চপদে তার মন্ত্রিসভার অনেক নিয়োগে স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে।
এই যেমন কূটনীতি সম্পর্কে খুব কম ধারণা এবং বিশ্ব সম্পর্কে খুবই কম জ্ঞান নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব পদে রয়েছেন ডেভিড ল্যামির। চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভসকে অর্থনীতিবিদ বলা হয়েছিল,যদিও তিনি অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক পরিবহন সচিব লুইস হাই দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পদত্যাগ করেন।
প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, যে আসনটি প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের আসন হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের লাগোয়া।
তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল