এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদারের ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে গতকাল রবিবার একটি মামলা করেছেন।
অন্যদিকে ৩০ লাখ ডলার দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিও। গত বছরের অক্টোবরে ওই অনুসন্ধন শুরু করেছিল সিআইডি। নজরুল ইসলাম মজুমদার দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদে ছিলেন। এ ছাড়া ব্যাংক মালিকদের সংগঠনেরও চেয়ারম্যান পদে ছিলেন শুরু থেকে।
দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগে নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৭৮১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৪৫৪ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় নজরুল ইসলামকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম মজুমদার এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবিরও সাবেক চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে রাজধানীর গুলশানে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৫ আগস্টের পর তাকে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যানের পদও চলে যায় তার। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এর আগে দীর্ঘ ১৭ বছর নজরুল ইসলামের বলয়ে ছিল এক্সিম ব্যাংক। গত ২৫ অগাস্ট এক্সিম ব্যাংক ও বিএবির চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী নাছরিন ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ।
উল্লেখ্য, পোশাক রপ্তানির আড়ালে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লাখ ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের অভিযোগে নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে গত বছরের অক্টোবরে অনুসন্ধান শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।
সে সময় সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফিরোজা গার্মেন্টস লিমিটেড ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ১৩০টি এলসি বা বিক্রয় চুক্তি গ্রহণ করে। কিন্তু এর বিপরীতে নাসা গ্রুপ পণ্য পাঠালেও এর রপ্তানি মূল্য প্রায় ৩০ লাখ ডলার বাংলাদেশে না এনে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচার করে লন্ডনের ফিলিমোর গার্ডেন ও ব্রান্সউইক গার্ডেনে তার মেয়ে আনিকা ইসলামের নামে বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদার নাসা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড সুবিধার আওতায় বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল এনে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে শত শত কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে (আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং) দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম, সিআইডিতে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।