বিজয়ের মাসের শুরুতেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া বীর কন্যা বীরপ্রতীক তারামন বিবি । শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্ৰামে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর ।
তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে যান। আজ শনিবার দুপুর দুইটার দিকে নামাজে জানাজা শেষে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে দাফন করা হবে। গার্ড অফ অর্নারে অংশ নেবেন কুড়িগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম।
বীর প্রতীক তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, ডায়েবেটিস আর শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন। গেল মাসেও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা সিএইচএম হসপিটালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। পরে ২৭ নভেম্বর তিনি বাড়ি যান। সেখানে শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে মারা যান তারামন বিবি।
বীর প্রতীক তারামন বিবি কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম আবদুস সোহবান ও মায়ের নাম কুলসুম বিবি।তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ।
১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের।
মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩-১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান। একদিন দুপুরে খাবারের সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনী একটি গানবোট নিয়ে তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তারা শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন। এরপর তারামন অনেক সম্মুখযুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেকবার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে। তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান। যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক তাকে খুঁজে বের করেন।
নারী সংগঠনগুলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।