‘দুই দিন আগেও মোবাইল কইরা সুমন কইছে, মা আমি তোমার আর বড় আপার জন্য কাপড় নিয়া আইমু। তোমরা আমার লাইগ্যা দোয়া কইরো। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া কইরো। কিন্তু অহন সুমন আর আমারে মা কইয়্যা ডাকবো না। এই ব্যথা কেমনে সইমু আমি।’
পোশাককর্মী সুমনের মৃত্যুর সংবাদে এভাবেই আহাজারি করছেন মা ফিরোজা বেগম। বুধবার দুপুরে নিহত সুমনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বাড়িতে মা ও বড় বোনের আহাজারিতে নেমেছে শোকের ছায়া।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওলাইন এলাকায় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মিয়া (২২) নিহত হন। নিহত শ্রমিক সুমন মিয়া শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার পৌর শহরের কলাকান্দা মহল্লার আমির আলীর ছেলে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিহত শ্রমিক সুমনের বাবা আমির আলী ঢাকায় একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করেন। গৃহিণী মা এলাকাতে থাকেন। সুমনরা দুই ভাই, তিন বোন। ভাই-বোনের মধ্যে সুমন ছিলেন সবার ছোট। বড় ভাই পরিবার নিয়ে আলাদা হওয়ায় পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে প্রায় ২ বছর আগে সুমন ঢাকার সাভারের আনলিমা অ্যাপারেলস নামের পোশাক কারখানায় ফিনিশিং সেকশনে কাজ নেন। শুরু থেকে সেখানে কাজ করেছিলেন সুমন। প্রায় দেড় বছর আগে একই কারখানায় চাকরি করা বরিশালের মেয়ে তানিয়া নামের নারী শ্রমিককে বিয়ে করে একসঙ্গে কাজ করছিলেন। সুমন ছিলেন পরিবারের উপার্জনের মূল ভরসা।
বুধবার দুপুরে নিহত সুমনের কলাকান্দা বাড়িতে গেলে আহাজারি করতে করতে সুমনের মা ফিরোজা বেগম বলেন, মাসে মাসে সুমন ট্যাহা পাডাইাতো। ওই ট্যাহা দিয়ে আমগরে সংসার চলতো। এহন আমাদের সংসার ক্যামনে চলবো? সুমনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে আছে, ঢাকা থেকে তার লাশ বাড়ি আনব ক্যামনে?
শ্রীবরদী পৌরসভার মেয়র মো. আবু সাঈদ বলেন, সুমন ছেলেটি ভালো ছিলো। ওই ছিলো পরিবারের উপর্জনের একমাত্র ভরসা। সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় সুমন নিহত হয়েছে। তার লাশ এলাকায় আসার পর দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।
শ্রীবরদী থানা পুলিশের ওসি রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, পোশাক শ্রমিক সুমনের সাভারে নিহত হওয়ার বিষয়টি স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি। তবে কেউ লিখিতভাবে কিছু জানায়নি।