রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম এলাকা লক্ষ্মীপুর-সিঅ্যান্ডবি সড়ক প্রতি রাতে ঝাড়ু হাতে নেমে পড়েন এক নারী। আর সবাই যখন বিছানায় গা এলিয়ে গভীর নিদ্রায় মগ্ন তখন নগরীকে বাসযোগ্য করেন তিনি।
২৫ বছর ধরেই এ কাজ করে আসছেন তিনি। কি শীত, কি বর্ষা! বালিশ, কম্বল নয় ঝাড়ুই তার রাতের নিত্যদিনের সঙ্গী। নাম তার আজিরন।
এভাবেই দুই ছেলেকে মানুষ করেছেন। সংসারের ঘানি টেনেছেন। ছেলেদের বড় করেছেন। বড় ছেলে জনি আহম্মেদকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করিয়েছেন।
সেই ছেলে এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে ভালো রোজগার করছেন।
তবু খোলেনি আজিরনের ভাগ্যেরা চাকা। ঝাড়ু একদিনের জন্যেও ছাড়েনি তাকে।
জানা গেছে, ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। বউকে নিয়েই ব্যস্ত। মায়ের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না।
২৫ বছর আগে স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে দুই ছেলে জনি ও মনাকে নিয়ে মায়ের বাড়ি নগরীর বাগানপাড়া রেললাইন বস্তিতে উঠেছিলেন।
সেসময় অন্যজনের বাড়ি ও ছাত্রাবাসে রান্না করে একাই পুরো সংসার চালাতেন আজিরন। তাতেও যখন হচ্ছিল না তখন একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ নেন।
দিনরাত দুই চাকরি করে একমাত্র উপার্যনক্ষম সদস্য হয়ে সংসারকে আগলে রাখছিলেন তিনি। একসময় এলাকার এক স্বহৃদয়বান ব্যক্তির সাহায্যে দৈনিক মজুরিতে নগরীর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ পান আজিরন। সেই থেকে ঝাড়ুই তার জীবন চাকার অবলম্বন।
সেই চাকরি আজও স্থায়ী হয়নি। সে আশায় ২৫ বছর ধরে কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে আজিরন।
রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন জানিয়েছেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৩০ ওয়ার্ডজুড়ে ঝাড়ুদার ২৯৩ জন রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। তবে এদের চাকরি স্থায়ী হয়নি আজ অবধি।
চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি আজিরন চেয়ে আছেন ছোট ছেলের মনার দিকে। তাকেও বড় ছেলের মতো পড়া লেখা শিখিয়েছেন।
বড় ছেলে নিজের পথ বেঁছে নিয়েছে। এবার ছোট ছেলে মেহেদি হাসান মনা মায়ের কাঁধ থেকে ২৫ বছরের সংসারের বোঝা সরাবে কিনা তাই দেখার বিষয়।
নাকি আজিরনকে ঝাড়ু হাতেই দিনরাত লক্ষ্মীপুর-সিঅ্যান্ডবি সড়কে দেখা যেতে থাকবে প্রতিদিনের মতো।