আধুনিকতার ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। মানুষের জীবনেও এসেছে অনেক সৌখিনতা-স্বাচ্ছন্দ। আধুনিককালে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগে পৃথিবীর মানুষ যখন ভাসছে উন্নত জীবনের, ঠিক তখনো চোখে পড়ে নালিতাবাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট বাজারে মান্দাতা আমলের সেই নরসুন্দরদের (নাপিত)। এসব নরসুন্দররা এখন অবহেলিত জীবন-যাপন করছেন।
শেরপুরে এখনো গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন হাট-বাজারে চোখে পড়ে সেইসব সনাতনী পদ্ধতির ভ্রাম্যমান কাঠের পিঁড়ি, প্লাস্টিকের টুলে সারিবদ্ধভাবে বসে চুলকাটার জন্য নরসুন্দরদের ভ্রাম্যমান সেলুন। যাদের কথা এখন আর কেউ ভাবেন না। এক সময়ে গ্রামের অনেকেই ধানের মৌসুমে নরসুন্দরদের এককালীন কিছু ধান দিয়ে সারা বছর পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যদের এবং ছোট ছেলে মেয়েদের চুল-দাড়ি ছাটা এবং কামিয়ে থাকার চুক্তি সেরে ফেলতেন। এসব নরসুন্দরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আধুনিকতার যুগে বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতেন এখনো লড়ছেন তারা।
এই নরসুন্দরেরা গ্রাম গঞ্জের ফুটপাত, অলিগলি ও হাট-বাজারে পিঁড়ি, কাঠ বা প্লাস্টিকের টুলে বসিয়ে চুল-দাঁড়ি ছাঁটান। অন্য পুরুষের চুল-দাড়ি ও গোফ ছাটিয়ে সুন্দর করেন বলেই অনেকে এদের নাম নরসুন্দর বা নাপিত বলেই ডাকেন। বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশে মাত্র ৫-১০ বছর পূর্বেও যা ছিল তা যেন রূপকথার গল্পের মতোই মনে হবে। সময় এসেছে দিন বদলের। কিন্তু ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি এসব নরসুন্দরদের। সময় পেরিয়ে বর্তমান যুগে বিলাসবহুল সেলুনের পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে। শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত ও আকর্ষণীয় চেয়ারে ঘরে বসে এখন হরেক রকম ডিজাইনের চুল ছাঁটা হয়।
শেরপুরে নালিতাবাড়ীর উপজেলার কদমতলী গ্রামের নরসুন্দর মোহাম্মদ আলী (২৬) সেই সনাতনী পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমান সেলুনই এখনো চালু রেখেছেন। তিনি জানান, স্ত্রী সন্তানসহ ৪ জনের পরিবারের ব্যয়ভার বহন করছেন এই ভ্রাম্যমান নরসুন্দরের দোকান পরিচালনা করেই। তার দাদা শামসুদ্দিন ও পিতা হযরত আলী (হজ) এই পেশার উপার্জনে তাদের সংসার চালিয়েছেন।
তিনি বলেন, উপজেলার নন্নী, বারমারী ও কদমতলী বাজারে প্রতি গ্রাহকের চুল কাটেন সেভ করাসহ ৩০/৩৫ টাকা করে। এতে প্রতি হাটের দিন ২৫০ থেকে ৩০০টাকা রোজগার হয়। এই রোজগারের টাকায় কোন মতে সংসার চালান। অন্যদিকে সেলুনে চুল কাটতে লাগে প্রতিজন ৫০/৬০টাকা করে। খরচ কম হওয়ায় অনেকেই এসব ভ্রাম্যমান নরসুন্দরদের সেলুনে বসে চুল কাটেন।
তাছাড়া রাত পোহালেই রুটি-রুজির সন্ধানে তারা ছুটে চলেন বিভিন্ন হাট-বাজারে। এমনকি গ্রাম-গঞ্জের জনবসতি এলাকা পর্যন্ত। নালিতাবাড়ীর শিধুলী চৌরাস্তা এলাকার নরসুন্দর আব্দুর রফিক (২৮) বলেন, মন না চাইলেও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘরে বসে থাকতে পারি না। বাঁচতে তো হবে? তাই এখনো কাজ করেই চলেছি। কি আর করবো বলেন? আমাদের কেউ দেখে না, কেউ আমাদের খবরও নেয় না।