ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল প্রায় সব ছাত্র সংগঠনই প্যানেল ঘোষণা করেছে। এদের মধ্যে কেউ জোটগতভাবে কেউ এককভাবে প্যানেল ঘোষণা করে।
সোমবার প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল, বাম জোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। পাল্টা প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগের একটি অংশ। তবে প্যানেল ঘোষণা হলেও সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো এবং বিভিন্ন দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ে একটি প্যানেল গঠনের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
এদিন ছিল ডাকসু ও হল সংসদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের শেষ দিন। ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হয়। জমা দেয়া যাবে আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।
২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টায় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে তা ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নিকট লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২ মার্চ দুপুর ১টা পর্যন্ত। ৩ মার্চ বিকাল ৪টায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ছাত্রদলের প্যানেল
সোমবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা করা হয়। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ প্যানেল ঘোষণা করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাবেক ছাত্রনেতা রকিবুল ইসলাম বকুল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান। ঘোষিত প্যানেলের নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপকর্মে জড়ানোসহ নানা অভিযোগ এসেছে ছাত্রদলের পক্ষ থেকেই।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে সংগঠনটির বড় একটি অংশকে। এদিকে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি ছাত্রী হল এবং সংখ্যালঘুদেরহ হল জগন্নাথে কোনো প্যানেল দেয়নি।
ঘোষিত প্যানেলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মো. আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে খোরশেদ আলম সোহেলকে মনোনীত করা হয়েছে। অন্যান্য পদে মনোনয়ন পেয়েছেন স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান নাদিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান।
কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক কানেতা ইয়ালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল আলম উজ্জল, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজ আহমেদ প্রিন্স, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কাইয়ূম উল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক মনিরুজ্জামান মামুন, ছাত্রপরিবাহন বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুর রহমান চৌধুরী এবং সমাজসেবা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম।
এছাড়া সদস্য পদে মনোনীতরা হলেন- হাবিবুল বাশার, শাহিনুর ইসলাম, ইকবাল হোসাইন, সাইদ বিন আনোয়ার, সাহাব উদ্দিন, মাহমুদুল হাসান, সাফায়াত হাসনাইন সাবিত, তানভীর আজাদী সাকিব, সুলতান মো. সালাউদ্দিন সিদ্দিক, শরীফুল, ইমাম আল নাসের মিশুক, আলমগীর হোসেন ও আবুল বাশার।
বাম জোটের প্যানেল
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের প্যানেলে সহ-সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং তার সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হচ্ছেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ প্যানেল ঘোষণা করেন ঐক্যের সমন্বয়ক ইমরান হাবিব রুম্মন। এই প্যানেলে ছাত্র ফ্রন্টের (একাংশ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সাদিকুল ইসলাম সাদিককে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
জোটের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন- স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে রাগীব কান্তি রায় (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রফ্রন্ট, ঢাবি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক উলুল ওমর তালুকদার (আহ্বায়ক, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী), কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুহাইল আহমেদ শুভ (সদস্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট), আন্তর্জাতিক সম্পাদক মীম আরাফাত মানব (কর্মী, ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি)।
সাহিত্য সম্পাদক রাজীব দাশ (সাধারণ সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি), সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাহাদ হাসান আদনান (কর্মী, ছাত্র ফ্রন্ট), ক্রীড়া সম্পাদক শুভ্র নীল রায় (পাঠাগার সম্পাদক, ছাত্র ফ্রন্ট), ছাত্র পরিবহন সম্পাদক হাসিব মোহাম্মদ আশিক (সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি), সমাজসেবা সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ (কর্মী, ছাত্র ফেডারেশন, ঢাবি)।
সদস্য পদে প্রার্থী হচ্ছেন- মইনুল ইসলাম তুহিন, আমিনুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, আফনান আক্তার, মিত্রময়, সালমান ফারসি, রাহাতিল রাহাত, আরমানুল হক, জেসান অর্ক মারান্ডী, মনীষা আক্তার, মাহির ফারহান খান, উদয় নাফিস ও প্রত্মপ্রতীম মেহেদী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে ভিপি (সহসভাপতি), যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ রাশেদ খানকে জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) করে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।
সকালে ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। প্যানেলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।
ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি পদের মধ্যে ১৭টি পদে প্রার্থী দিচ্ছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরিষদ থেকে ডাকসুতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন নাজমুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে সোহরাব হোসেন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে শেখ এমিলি জামাল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে হাবীবুল্লাহ বেলালী, সাহিত্য সম্পাদক পদে আকরাম হোসেন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নাহিদ ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে মামুনুর রশীদ, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে রাজিবুল ইসলাম আর সমাজসেবা সম্পাদক পদে আখতার হোসেন।
সদস্য পদে লড়বেন- উম্মে কুলসুম বন্যা, রাইয়ান আব্দুল্লাহ, সাব আল মাসানী, ইমরান হোসেন ও শাহরিয়ার আলম সৌম্য।
ছাত্রলীগের বিদ্রোহী প্যানেল
এদিকে প্যানেল নিয়ে ছাত্রলীগে অসন্তোষ ও ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। রোববার ডাকসুর পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও হল সংসদের প্যানেল ঘোষণার পর এ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ এলাকার এবং ‘কাছের লোক’ দিয়ে দিয়ে প্যানেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ সংগঠনটির একটি অংশের।
এর ফলে পাল্টা প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগের একটি অংশ। নতুন এই প্যানেলের নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরিষদ’।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে প্যানেল ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহান খান। যিনি নিজেই প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হচ্ছেন।
অন্যান্য পদে প্রার্থী হচ্ছেন- জিএস পদে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল, এজিএস পদে ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক মো. রনি।
প্যানেলে আরও রয়েছেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মো আল মামুন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জিএম সাব্বির, আন্তর্জাতিক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক মো. মাসুদ রানা এবং ক্রীড়া সম্পাদক গাজী নাভিদ হোসেন।
ছাত্রলীগের প্যানেলের বিষয়ে সোহান খান বলেন, ছাত্রলীগের যে প্যানেলটি দেয়া হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় যারা যে পদের যোগ্য না তাদের সেই পদে দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে দেয়া হয়নি। এরকম কিছু বিষয়ে বিতর্ক থাকার কারণে আমরা আংশিক প্যানেল দিয়েছি।
এরপর আমরা টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দেব। সংবাদ সম্মেলন শেষে হলে হলে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তারা।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা কমিটি ঘোষণার নয় মাস পরেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি, তারা ভবিষ্যতে (ডাকসুতে নির্বাচিত হয়) কতটুকু দিতে পারবে? ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট- সেক্রেটারি যদি ভিপি-জিএস হিসেবে নির্বাচিত হন তাহলে তারা কোন পরিচয় দেবেন? ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি নাকি ডাকসুর ভিপি-জিএস? আমরা কয়েকদিন আগে দেখেছি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রদলকে মধুর ক্যান্টিনে ফুল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে। আমরা যদি প্যানেল দেই আমাদেরকেও স্বাগত জানাবে বলে আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা এত ক্ষুদ্র জায়গা থেকে তো আর প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের নামের তালিকা দিতে পারি না। আমাদের যেহেতু অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করব আমরা কতটা যোগ্য।
বাংলাদেশ ছাত্র মুক্তিজোটের প্যানেল
এদিকে প্যানেল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্র মুক্তি জোট। ‘ডান-বাম নয়, হাঁটতে হবে বাংলাদেশ বরাবর’ এই স্লোগান নিয়ে প্যানেল ঘোষণা করে জোটটি। এতে ভিপি প্রার্থী হয়েছেন শিহাব শাহরিয়ার সোহাগ, জিএস মো. রাশেদুল ইসলাম এবং এজিএস হয়েছেন অনুপ রায়।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর