গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে বিকাশ, ভিআইপি, মিরপুর লিংক, উইনারসহ ২৭টি বাস আটকে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসের সামনে বিকাশ, ভিআইপি, মিরপুর লিংক, উইনারসহ যেসব বাস হাফ ভাড়া নেয় না তাদের আটকিয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা বাস আটকালেও কোনো ধরনের ভাঙচুর করেনি বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মালিকপক্ষের হস্তক্ষেপে দুপুর ২টার দিকে কিছু বাস ছেড়ে দিয়ে প্রত্যেক পরিবহনের একটি করে বাস নিউমার্কেট থানার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে বাসের মালিকপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থী এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে।
অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা থানার সামনে স্লোগান দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল উদ্দীন মাহী যুগান্তরকে বলেন, এই রুটের সব বাস শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেয় না। তাই শিক্ষার্থীরা বিকাশ, ভিআইপিসহ ২০টির বেশি বাস আটকে রেখেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এই রুটের বাসগুলো সরকারি নির্দেশ অমান্য করে হাফ ভাড়া নেয় না। অনেক সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তাই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেছে। আমি সব বাস মালিকদের অনুরোধ করব, তারা যেন সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেন।
নিউমার্কেট থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ উপায়েই আন্দোলন করেছে। তাদের হাফ ভাড়ার দাবির বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক।
রাজধানী ঢাকায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন বাস। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া আদায়ের নিয়ম প্রচলিত থাকলেও নানা অজুহাতে তা মানে না অধিকাংশ বেসরকারি গণপরিবহন।
প্রায় বাসেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ‘হাফ ভাড়া’ বা অর্ধেক ভাড়া নিয়ে কনডাক্টরদের নিয়মিত তর্কবিতর্কের ঘটনা ঘটে। বাসের হেলপার-কনডাক্টররা দাবি করেন, অর্ধেক ভাড়া নেয়া নিষেধ রয়েছে কোম্পানির পক্ষ থেকে, তাই তারা অর্ধেক ভাড়া নিতে পারবেন না। রাজধানীর বেশিরভাগ বাসের দরজার ওপরে বা পাশেই লেখা রয়েছে, ‘হাফ পাস নাই’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ নেই।
তবে এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতে কোনো বাস কোম্পানি অস্বীকৃতি জানায়, তা হলে অভিযোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সব বাস কোম্পানিকেই শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়া নিতে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার বলেছিলেন, সরকারি পরিবহন বিআরটিসিসহ অন্য বাসে শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া দেবে। তাদের কাছ থেকে বাসগুলো হাফ ভাড়া না নিলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ করবেন। ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার পরও নির্বিকার বাস মালিক পক্ষ। তবে এই সমস্যা সমাধানে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক।