সিঙ্গাপুরে পৌঁছার পরপরই বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এ সময় তার রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। পাশাপাশি শারীরিক অবস্থাও ছিল স্থিতিশীল।
সোমবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান।
উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে।
সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাঠানো হয়।
এদিন বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় হাসপাতালটির ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ডক্টর ফিলিপ কোহর তত্ত্বাবধানে তাকে ভর্তি করা হয়। স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
এর আগে এদিন দুপুরে বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। অর্থাৎ তার শারীরিক ঝুঁকি আগের চেয়ে কম কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না।
এদিকে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের পথে কাদেরের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন টেকনিশিয়ান। রোববার সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেই ঢাকায় আসেন তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম ও দলের উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিমানবন্দরে দলের সাধারণ সম্পাদককে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ভারতের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে আসেন এবং ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করেন।
তিনি কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত বোর্ড সদস্যদের বলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। যদি তাকে বিদেশে পাঠানোর কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকে, তা হলে এটিই উপযুক্ত সময়, নিতে হলে আজই নিতে হবে।
এর পরই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হলে তিনি অনুমতি প্রদান করেন। দুপুর সোয়া ৩টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে তাকে বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্স বিমানবন্দরের দিকে রওনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, রাত ৮টা নাগাদ ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে তাকে সরাসরি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে তিনি হাসপাতালটির ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ডা. ফিলিপ কোহর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তার মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে।
এদিকে ডা. দেবী শেঠি চলে যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে ওবায়দুল কাদেরের সর্বশেষ শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
এ সময় মেডিকেল বোর্ডের অন্য সদস্যরা তার সঙ্গে ছিলেন। অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তার চেতনা কাজ করছে, স্পর্শ করলে সাড়া দিচ্ছেন।
মাঝে মাঝে তিনি গলার ভেতরে ঢোকানো ভেন্টিলেশনের নল খুলে ফেলতে চেষ্টা করছেন। এ জন্য তাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
তবে এখনও তিনি সংকটমুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, সংকটমুক্ত বিষয়টি আপেক্ষিক। তার রক্তের চাপ বর্তমানে ১১০-১৩০, মূত্র প্রতি ঘণ্টায় ১০০ মিলি., যা স্বাভাবিক। গতকালের চেয়ে তার রক্তে অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বেড়েছে, ইলেক্টোলাইটের যে ইমব্যালান্স অবস্থা ছিল, সেটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
ইনসুলিন প্রয়োগ করে তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এমনকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল যেখানে তিনটি ওষুধ দিতে হয়েছে, সেখানে আজ একটি ওষুধেই কাজ হচ্ছে।
তার সিওপিডি (ক্রোনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমুনারি ডিজিজ) সমস্য থাকায় ভেন্টিলেশন দিয়ে রাখা হয়েছে। তাই সার্বিকভাবে বলাই যায় তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। অর্থাৎ তার শারীরিক ঝুঁকি আগের চেয়ে কম কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না।
প্রসঙ্গত, রোববার রাত সাড়ে ৩টায় নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এর পর সকালে তার শ্বাসকষ্ট বাড়লে সাড়ে ৭টার দিকে বিএসএমএমইউতে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।
সেখানে হৃদযন্ত্রে তিনটি মেজর ব্লকসহ একাধিক ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে শতভাগ এবং একটিতে ৯৯ শতাংশ ব্লক ছিল। এ সময় তার হার্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে একটি এনজিওগ্রাম করে স্টেন্টিং করা হয়।
তার পর থেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর পূর্ব পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে আইসিসিইউর (ইনটেনসিভ করোনারি কেয়ার ইউনিট) ২নং শয্যায় চিকিৎসাধীন।
#যুগান্তর