‘সমান ভাবি, সমান থাকি, সমান সমান সামনে চলি’— এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রথম প্রহরে আঁধার ভাঙার শপথ নিলেন নারীরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে কয়েক শ এই শপথ নেন। ‘আমরাই পারি’, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আঁধার ভাঙার এই শপথ অনুষ্ঠানে ঢাবির পাঁচ ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেক নারী অংশ নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ‘আমরাই পারি’র চেয়ারপারসন ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, ঢাবির অধ্যাপক গীতিয়ারা নাসরিন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ঢাবির প্রক্টর গোলাম রব্বানী, ‘আমরাই পারি’ জোটের সমন্বয়ক জিনাত আরা সহ আরো অনেকে।
মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, আমরা অচিরেই দেখব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্রীরা তাদের নিজ দায়িত্বে, নিজ সম্মানবোধে, নিজ অধিকারে যখন তাদের প্রয়োজন তখন তারা হল থেকে বের হতে পারছে। যখন তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে তারা ফিরে আসবে। এবং সেই সম্মান তাদেরকে নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখাবে। সবসময় নারীর যা কিছু হয়, নারীকেই তার দায়-দায়িত্ব নিতে হয়। নারীর পথ অনেক চ্যালেঞ্জ অতএব নারী বাইরে যাবে না; এই চ্যালেঞ্জ যারা তৈরি করে তাদেরকে অপসারিত করতে হবে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে প্রথম যে কথাটি ছিল তা হলো— ‘ভাই ও বোনেরা’। সেদিনই বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন, ভাই ও বোনেরা, নারী এবং পুরুষ তাদের যৌথ প্রয়াসে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। ভাই ও বোনদের সম্বোধন করে জাতির পিতা যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ভাষণ কিন্তু আজকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী দলিল। ৭ মার্চের দিন নারী-পুরুষের সম্মিলিত উপস্থিতি ছিল, মহান মুক্তিযুদ্ধ যেটি পরিচালিত হয়েছিল নারী ও পুরুষের সমান অবদানের মাধ্যমে। এই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান আছে।
তিনি বলেন, আমাদের হলের মেয়েরা অত্যন্ত আনন্দচিত্তে এখানে আসছে। তাদের এই সময়কাল ‘মাই ফ্রিডম ডে’ হিসেবে গণ্য হচ্ছিল। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা এটিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখতে চাই।
অনুষ্ঠান থেকে সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নারীর জন্য প্রতিস্থান, প্রতিটি সময়, প্রতিটি মুহূর্তকে নিরাপদ করার জোরালো দাবি জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘নারীর চলাচলের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মনের আঁধার, রাতের আঁধার নয়।’
এর আগে অনুষ্ঠানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। স্লোগানে স্লোগানে নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের কথা বলেন। বক্তব্য শেষে নির্যাতনে নিহত সব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে আঁধার ভাঙার শপথ করা হয়।