একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ইতিমধ্যে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
যদিও ভোট ডাকাতির অভিযোগে ফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত ছিল, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না। সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান করে শপথ নিয়েছেন সুলতান মনসুর।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদে স্পিকারের কার্যালয়ে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান।
সকালে শপথ নিলেও বিকালে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় গণফোরাম থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বহিষ্কারের ফলে এখন অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে তাহলে কী সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন? যদিও তিনি এর আগেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বপালন করেছিলেন।
আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও সুলতান মনসুর একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আজন্ম আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ কর্মী এবং বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। এই কথা বারবার বলে আসছি আমি। আমার রাজনৈতিক আদর্শ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী কঠিন সময়ে চার বছর ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ে দিনরাত কাটিয়েছি আমি। খেয়ে না খেয়ে, ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছি।
সুলতান মনসুর আরও বলেন, নির্বাচনের আগেও আমি বলেছি, নির্বাচন করব ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর’। শুধু প্রতীকটা ছিল আমার ধানের শীষ। নির্বাচনী প্রচারণায় গায়ে মুজিব কোর্ট যেমন ছিল এখনো তেমন আছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় হাজার হাজার ভোটারের সামনে মাইকে বলেছি, আমি আওয়ামী লীগের কর্মী, আমার প্রতীক ধানের শীষ। অতএব আমার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমি গণফোরামের কেউ ছিলাম না, এখনো নেই। আমি আওয়ামী লীগের কর্মী। নির্বাচনের সময় একটি নিবন্ধিত দলের সদস্যপদ নিতে হয়। নির্বাচন করার স্বার্থে আমি আমার চিন্তার কাছাকাছি দল হিসেবে গণফোরাম থেকে সদস্যপদ নিয়েছিলাম। এটি শুধু নির্বাচনের কারণে এবং নিয়মরক্ষার জন্য করেছি। তারা আমাকে সে সুযোগ করে দেয়ায় আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাকে বহিষ্কার করার কি আছে, আমি তো তাদের কেউ না, ছিলামও না।
এছাড়া এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি আবারও আওয়ামী লীগে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে সুলতান মনসুর বলেছিলেন, আমি অন্য কোনো দলে জয়েন করি নাই। আমি কখনও আওয়ামী লীগ ছেড়ে আসিনি, বহিষ্কৃতও হইনি।
বৃহস্পতিবার শপথ নেয়ার পর সংসদে যোগ দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি। এ সময় তিনি সংসদের বলেন, ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ী হলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হইনি।
জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
স্পিকারের আসনের বাম পাশে বিরোধী দলের আসনের দ্বিতীয় সারিতে সুলতান মনসুরকে আসন দেওয়া হয়।
এদিন শপথ নেয়ার আগে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘সকল কথার উত্তর আমি দেব না এ কারণে যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সেসব সিদ্ধান্তের সময় আমিও ছিলাম। আমিও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে একটা কথা বলতে পারি, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতার নলেজেই আমি এটা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘তারা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে, আমি আমার ভূমিকা পালন করব। দল হিসেবে তারা সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকুন। আর আমার ভূমিকার অপেক্ষায় থাকুন।’
এ সময় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাকি ৭ জনকে শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাব শপথ নিয়ে ন্যায্য দাবি ও সমস্যা নিয়ে তারাও সংসদের কথা বলুক। তাদের বক্তব্য সংসদের ভেতরে বাইরে আলোচনা হতে পারে। আওয়াজ উঠতে পারে।’
এদিকে শপথ নেয়ায় গণফোরাম থেকে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
মন্টু এ সময় দাবি করেন, তাদের দলের আরেক নির্বাচিত সদস্য মোকাব্বির খান এমপি হিসেবে শপথ নেবেন না।
শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন- সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের এমন দাবির জবাব দিতে গিয়ে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, ‘গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে বহিষ্কার করার’।
এর আগে গত ২ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেন গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান। ৭ মার্চ শপথ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।
সে অনুযায়ী সংসদ সচিবালয় বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ শপথ নিলেও শেষ মুহুর্তে পিছু হটেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ভোট করে জয়ী হন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা নির্বাচনের আগে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগ দেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেন তিনি। নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৮টি আসন পায়। এর মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের আসনটিও রয়েছে।
#যুগান্তর