জীবনে ‘প্যারা’ শব্দ শুনিনি, ব্যবহারও করিনি…। কোকা-কোলা এটা কী ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছে- প্রশ্ন হাইকোর্টের। কোমল পানীয় কোকা-কোলার (কোক) বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃত শব্দ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতি।
কোকের বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে দায়ের করা রিটের ওপর সোমবার শুনানি চলছিল। এদিন দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, “আমি আমার জীবনে ‘প্যারা’ শব্দ শুনিনি, ব্যবহারও করিনি… কোকা-কোলায় এটা কী ধরনের শব্দ ব্যবহার!”
এদিন রিটকারী আইনজীবী মনিরুজ্জামান রানা কোকা-কোলার বোতল বিচারপতির সামনে হাজির করেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়। রিটকারীর আইনজীবী আদালতকে বলেন, ‘এ ধরনের ভাষার বিকৃতি বাংলা ভাষার জন্য অপমানজনক। অবিলম্বে বিজ্ঞাপনে ভাষার বিকৃতি বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হোক।’
অন্যদিকে কোকা-কোলার আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম বলেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া দেশের প্রচলিত আইনে বাংলা ভাষার ব্যবহার কোন অপরাধ নয়। এ সময় আদালতে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ কোকা-কোলার আইনজীবীর কাছে জানতে চান, পানীয়তে বাংলা না লিখলে কী হতো? কোকের আইনজীবী উত্তরে বলেন, আমার ভালো লেগেছে, লিখেছি। তখন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তাহলে লিখতেন পানির ঠিলি।
এ সময় ব্যাপক হাস্যরসাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আদালতে। পরে রিট আবেদনে ত্রুটি থাকায় রিটকারীর আইনজীবীকে সেটি সংশোধন করে আবারও আদালতে আসতে বলা হয়।
কোকা-কোলার বোতলের গায়ে অস্থির, ফাঁপর, মাথা নষ্ট, জটিল, আগুন, পিছলা, আলু, জিনিস, গাব, সেই, ব্যাপক, জিরো, বাবা, আলপিন, আরকি ইত্যাদি শব্দে নামকরণ করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে, যা বাংলা ভাষার বিকৃতির শামিল বলে মনে করেন রিটকারী।
কোমল পানীয় কোম্পানি কোকা-কোলার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃত শব্দ কেন ব্যবহার করা হচ্ছে তা জানতে চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান রানা।
গত বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে প্রচারিত কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধেরও নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়। সেই সঙ্গে বাংলা ভাষার বিকৃতি বন্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে রুল জারিরও আর্জি জানানো হয়।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জাগো নিউজকে রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রিটকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান রানা জানান, রিট কোকা-কোলার ব্যবসা বন্ধের জন্য করা হয়নি। বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধে করা হয়েছে।
এ রিটের বিবাদীরা হলেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইন্টারন্যাশনাল বেভারেজেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
রিটকারী আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান রানা জাগো নিউজকে আরও বলেন, কোমল পানীয় কোকা-কোলার বোতলের বিজ্ঞাপনে জটিল, চরম, মাথা নষ্ট, বাবু, ঢিলা, ফাঁপর, জান, গুটি, গাব, আগুন, কড়া, অস্থির, পার্ট, প্যারা, ব্যাপক, যা-তা এর মতো বাংলা শব্দের ব্যবহার নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
আইনজীবী জানান, সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ থেকে অনুমতি নিয়ে বুধবার চন্দন চন্দ্র সরকারের পক্ষে এ রিট আবেদন করেছি। তিনি বলেন, রিট আবেদনে কোমল পানীয় কোকা-কোলার বোতলের বিজ্ঞাপনে বাংলা শব্দের অপব্যবহার কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না- তা জানতে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
মনিরুজ্জামান রানা বলেন, এ শব্দগুলো বোতলে বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা প্রচার করছে। এটা আপত্তিজনক। আমরা চাই এ ধরনের শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে। কারণ একটা শিশু দোকানে গিয়ে বলছে, ‘আমাকে একটা প্যারা দেন’, ‘একটা মাথা নষ্ট দেন।’ এটার তো নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হচ্ছে। তাই এটার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ কারণেই রিট আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার এ রিটের বিষয়ে জানান, টেলিভিশন ও প্রিন্টমিডিয়ায় কোকা-কোলা বেভারেজ কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় বাংলা ভাষায় একই শব্দের কয়েকটি অর্থযুক্ত বিভিন্ন বাক্য ব্যবহার করা হয়। যা বাংলা ভাষার বিকৃতি ও শ্রীহীন মনে হয়। এমনকি কুরুচিরও প্রকাশ পায়।