মাদ্রাসা থেকে পালানোর অপরাধে শিকলে বেঁধে ইব্রাহিম (১০) নামের এক ছাত্রকে আরবি শিক্ষক হাফেজ মো. ফোরকান মিয়া নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে পুলিশ ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করেছে।
আমতলী সিনিয়ির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেন শিক্ষক ফোরকান মিয়াকে সোমবার জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ইব্রাহিম তালতলী উপজেলার বড় অংকুজানপাড়া কারিমিয়া হাবিবিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের হেফজো বিভাগের ছাত্র।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে উপজেলার বড় অংকুজান পাড়া গ্রামের আবদুল রহমানের পুত্র ইব্রাহিমকে কারিমিয়া হাবিবিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। ওই সময় থেকেই ছাত্রকে শিক্ষক ফোরকান মিয়া বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছিল। শিক্ষকের নির্যাতন সইতে না পেরে ছাত্র ইব্রাহিম কয়েকবার মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যায়।
মাদ্রাসা থেকে পালানোর অপরাধে ওই শিক্ষক ছাত্রকে গত এক বছর ধরে মাদ্রাসার হোস্টেলে শিকলে বেঁধে তালা দিয়ে রাখে। প্রয়োজন ছাড়া ওই ছাত্রের শরীর থেকে শিকল খুলে দেন না তিনি। শিক্ষকের অসহনীয় নির্যাতন সইতে না পেয়ে রোববার সন্ধ্যায় কৌশলে ছাত্র ইব্রাহিম হোস্টেলের খুঁটি থেকে তালা খুলে শরীরে শিকল বাঁধা অবস্থায় পালিয়ে যায়।
মাদ্রাসা থেকে তিন কিলোমিটার শরীরে শিকল নিয়ে বারোঘর নামক স্থানে পৌঁছে ইব্রাহিম। ওই স্থানের লোকজন শিশুটির শরীরে শিকল বাঁধা দেখে ধরে ফেলে। পরে পুলিশে খরব দেয়। পুলিশ গিয়ে ওই ছাত্রকে শরীরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে তালতলী থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় ওই ছাত্রের নানা হারুন মিয়া বাদী হয়ে শিক্ষক ফোরকানকে আসামি করে তালতলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই রাতেই শিক্ষক ফোরকানকে ওই মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ছাত্রের নানা হারুন মিয়া বলেন, আমার নাতি ইব্রাহিমের মা বিদেশে থাকেন। আর ওর বাবা ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন। এ সুবাধে নাতি ইব্রাহিম আমার বাড়িতে থাকে। গত দুই বছর আগে ইবাহিমকে বড় অংকুজানপাড়া হাবিবিয়া মাদ্রাসা কমপ্লেক্সে হেফজো বিভাগে ভর্তি করে দেই। ভর্তির পর থেকেই শিক্ষক ফোরকান আমার নাতিকে নির্যাতন করে আসছে। কিন্তু আমার নাতি এ নির্যাতনের কথা কখনো জানায়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষকের নির্যাতন সইতে না পেরে কয়েকবার পালিয়ে এসেছে। বৃহস্পতিবার মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে এলে শুক্রবার আমি ইব্রাহিমকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসি। এরপর শিক্ষক ফোরকান আমার নাতিকে শিকলে বেঁধে হোস্টেলের খুঁটিতে তালা দিয়ে বেঁধে রাখে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ইব্রাহিমকে মাদ্রাসা থেকে পালানোর অপরাধে শিক্ষক ফোরকান মিয়া শিকলে বেঁধে নির্যাতন করত বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে।
তালতলী থানার ওসি পুলক চন্দ্র রায় বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। শিক্ষক ফোরকানকে গ্রেফতার করে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সূত্রঃ যুগান্তর