পাঁচ বছর বয়সে আপন মাকে হারিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেহারার মধ্যে সেই হারানো মায়ের কিছুটা মিল পেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে গণভবনে প্রবেশ করেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী। এরপর ডাকসু ও হল সংসদের অন্য নেতারা গণভবনে প্রবেশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করেন নুর। প্রধানমন্ত্রী পরম মমতায় তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে দেন। এ সময় নুরও পরম শ্রদ্ধায় সেই হাত বুকের কাছে টেনে নেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করতে বলেন।
সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দোয়া পেয়ে বেশ হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি নুরুল হক নুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খুশি ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেন ডাকসুর নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীসহ ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রী দল-মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনী ধারা ফিরিয়ে আনতে ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ডাকসু নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষাবান্ধব ডাকসু গড়তে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর। ডাকসু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। শিক্ষাবান্ধব একটি কার্যকর ডাকসু গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান।
ভিপি নুরুল হক নুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আজকে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, এতদিন টিভিতে আমি ওভাবে দেখতে পারিনি, আজকে দেখে আসলে আমার মনে হয়েছে যে তাঁর মধ্যে আমার মায়ের চেহারাটা আমি কিছুটা দেখতে পেরেছি।’
নুর আরো বলেন, ‘আপনার প্রতি একটা অনুরোধ করব যে আপনি যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ২৮ বছর পরে, আপনার সরকার দৃঢ়তা দেখিয়েছে, সাহস দেখিয়েছে। ডাকসু নির্বাচন, যদিও এই নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু ছাত্রের, বা অনেকের, আমারও একটু অনিয়ম চোখে পড়েছে, ত্রুটি চোখে পড়েছে। সামনের নির্বাচনে সেই ত্রুটি বা অনিয়ম চোখে না পড়ে এবং প্রতি বছর যেন এই নির্বাচনটা কন্টিনিউটি থাকে।’
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৫ জন এবং ১৮টি হল সংসদ থেকে নির্বাচিত ২৩৪ জন প্রতিনিধি সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ডাকসু এবং হল সংসদের নেতারা।
অনুষ্ঠানে ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন পেয়েছি। এটিও বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্সা, তার কারণে আমরা পেয়েছি।’
এ ছাড়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রব্বানী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং হল সংসদের ১৮ জন সহসভাপতি বক্তৃতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সংগঠনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জিত চন্দ্র দাস স্বাগত বক্তব্য দেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। আর সেই ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে ডাকসু থেকে। দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে ডাকসু নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
কোটা আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনুপ্রেবশকারীরা যেন অর্জনগুলোকে নষ্ট করে না দেয় সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে ছাত্র সমাজকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ডাকসুর নবনির্বাচিতদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তরুণ প্রজন্মের মেধাকে কাজে লাগিয়ে তাঁর সরকার দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তিনি নবনির্বাচিত ডাকসু নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরভাবে চলুক, আর এজন্য সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ থাকতে হবে।’সূত্র:এনটিভি