কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে যৌতুক দাবির দুই লাখ টাকা না পেয়ে প্রজ্ঞা মোস্তফা নামে কলেজপড়ুয়া স্ত্রীকে ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করেছে স্বামী দেলুয়ার হোসেন মাহতাব। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ মাহতাবকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের উত্তর চাঁনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রজ্ঞা মোস্তফা কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থী। তার ৩ মাস বয়সের একটি শিশুকন্যা রয়েছে। আর এদিকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনার ঘাতক স্বামীর দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী ও মানবাধিকার সংস্থা সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।
জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে করিমগঞ্জ উপজেলার উত্তর চাঁনপুর গ্রামের মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে বিদেশফেরত দেলোয়ার হোসেন মাহতাব একই জেলার ইটনা উপজেলার লাইমপাশা গ্রামের আহসানুল্লাহ মাস্টারের মেয়ে প্রজ্ঞা মোস্তফার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বিয়ের পর থেকেই যৌতুকলোভী স্বামী বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দিচ্ছিল স্ত্রী প্রজ্ঞাকে। কিন্তু বাবার সামর্থ্য না থাকায় স্বামীর হাতে যৌতুক দাবির টাকা তুলে দিতে না পারায় তাদের দাম্পত্য কলহ লেগেই থাকত।
বৃহস্পতিবার সকালে পুনরায় বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক দাবির টাকা এনে দিতে চাপ দেয় দেলোয়ার। এ সময় এত টাকা আনা কোনো অবস্থাতেই এনে দিতে পারবে না বললে ক্ষিপ্ত হয়ে গরু জবাইয়ের ছুরি দিয়ে স্ত্রী প্রজ্ঞা মোস্তফাকে ঘরের ভেতর নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দেলোয়ার।
প্রজ্ঞা মোস্তফার বাবা আহসানুল্লাহ মাস্টার জানান, বিদেশ গিয়ে ফতুর হয়ে বাড়ি ফিরে আসা প্রজ্ঞার স্বামী দেলোয়ার হোসেন মাহতাব বিয়ের পর থেকেই মোটা অঙ্কের যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি গরিব মানুষ হওয়ায় মেয়ে প্রজ্ঞা বারবার স্বামীকে টাকা না চাইতে বুঝিয়েও কাজ হয়নি। যৌতুকের টাকার জন্য তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো।
করিমগঞ্জ থানার ওসি মো. মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অতিসম্প্রতি প্রজ্ঞার স্বামী দেলোয়ার ও তার এক ভাগনে ব্যবসার জন্য বাবাবাড়ি থেকে যৌতুক বাবদ দুই লাখ টাকার জন্য প্রজ্ঞার ওপর চাপ দিচ্ছিল। বাবার দারিদ্র্যতার কথা জানিয়ে এত টাকা দেয়া সম্ভব হবে না বললে বৃহস্পতিবার ক্ষিপ্ত হয়ে প্রজ্ঞাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং ঘাতক স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি। সংস্থার চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা বলেন, “প্রজ্ঞা মোস্তফা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এ রকম একটা মেধাবী তাজা প্রাণকে অকালে চলে যেতে হলো। প্রজ্ঞা মোস্তফার এ মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। ঘাতক স্বামীকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।’’