‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’ এটাই সৃজনশীল চিন্তার মূল কথা। বিশ্বাসের সাহায্যে সৃষ্টিশীল প্রতিভা উদ্ভাবনের উপায় হচ্ছে আমাদের মন থেকে অসম্ভব শব্দটা মুছে ফেলা কারণ অসম্ভব শব্দটা ব্যর্থতার প্রতীক। দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে কোনো কঠিন সংকটের মোকাবেলা করে শূণ্য থেকে যে বড় কিছু সৃষ্টি করা যায় তার উদাহরণ হলেন ডালিয়া রহমান, যিনি শিক্ষাজীবনে অনেক ভালো ফলাফল করেও আর দশজন মানুষের মত লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পিছনে ছোটেননি বরং কিভাবে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায় তা নিয়েই ভেবেছেন শৈশবকাল থেকে। এই ভাবনা থেকেই গড়ে তুলেছেন ‘আগ্রহ’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। যেখান থেকে আপাতত তিনি গ্রামীণ নারী এবং প্রতিবন্ধীদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
গত কয়েক দশকে শিল্পায়ন বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে কিন্তু এই শিল্পায়নই আবার আমাদের জন্য এক বিরাট অভিশাপ হিসাবে দেখা দিয়েছে। শিল্পবর্জ্যের ফলে ঢাকা ও এর আশেপাশের নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি ড্রিপ বাই ড্রিপ নামে জার্মান এক প্রতিষ্ঠান কে সাথে নিয়ে টেকসই পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট (ইটিপি) নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। কেবল একজন পরিশ্রমী উন্নয়নকর্মী হিসাবেই নয় সমাজের বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কে আরো সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য তিনি বিভিন্ন গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করছেন।
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন অধ্যয়ন নিয়ে স্নাতকোত্তর অর্জনকারী এই তরুণ মেধাবী উন্নয়ন গবেষক ঢাকা শহরের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালসমূহের সেবার মান নিয়ে একটি তুলনামূলক গবেষণা করেছেন যেটি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
ডালিয়া রহমান গত বছরের সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটনে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত আন্তর্জাতিক বাজেট নীতিমালা বিষয়ক এক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। এ বছর তিনি ইমপ্রুভিং ওয়াটার সিকিউরিটি ফর দ্যা পুওর প্রকল্পের গবেষক হিসাবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘পানি নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
গ্রামীণ নারীরা এখনও তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে পুরুষ ডাক্তারদের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায়, এই সমস্যা সমাধানে এবং গ্রামীণ নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে তাদের উপযোগী করে স্বাস্থ্যসেবা শুরু করেছেন যাতে করে সেবাই তাদের দোরগোড়ায় পৌছে যায় মানুষকে যেন আর বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়। তিনি উন্নয়ন নিয়ে মানুষের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। তিনি মনে করেন উন্নয়ন কার্যক্রম কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয় বরং সমাজের সকলেই যার যার অবস্থান থেকে এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তিনি মনে করেন সমাজে একজনের পক্ষে হয়ত দশজন মানুষকে দেখা সম্ভব নয় কিন্তু দশজন মানুষ এক হলে একজন কে পরিবর্তন করা সম্ভব। তিনি স্বপ্ন দেখেন চা শ্রমিকদের উপনিবেশিক ধারার শোষণ এবং বঞ্চনা থেকে বের করে এনে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করতে। তিনি অবহেলিত হাওড় অঞ্চল, উপকূলীয় এলাকা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, পাহাড়ি জনপদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে চান। এজন্য তিনি সরকার এবং দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা এবং অপার সম্ভাবনা আছে তাকে কাজে লাগালে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই বিশ্বব্যবস্থায় মর্যাদার আসনে সমাসীন হবে।