ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।৯ সদস্যের ওই মেডিকেল বোর্ডের প্রধান করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনকে।
রোববার সকাল ১০টায় এই বোর্ড গঠন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট। এর আগে সকালে তাকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে রয়েছেন বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক আবুল কালাম, অধ্যাপক রাইহানা আউয়াল, অধ্যাপক নওয়াজেশ খান, অধ্যাপক লুৎফর কাদের, অধ্যাপক বিধান সরকার, অধ্যাপক মহিউদ্দিন, ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলম ও জহিরুল ইসলাম।
এদিকে ওই ছাত্রীর যাবতীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন। রোববার দুপুরে তিনি জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষার্থীকে আগুনে পোড়ানোর ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর চিকিৎসা ব্যয় সরকার বহন করবে বলে জানিয়েছেন।
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা জানান, ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। আজ থেকে নল দিয়ে তাকে খাবার দেয়া হচ্ছে। যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে।
এর আগে রোববার সকালে ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, ‘মেয়েটির শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তার ব্যাপারে চিকিৎসকরা এখনও কিছু বলতে পারছে না। মেয়েটির চিকিৎসা চলছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।’
বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল যুগান্তরকে বলেন, তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। শরীরের তিন-চতুর্থাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রসঙ্গত ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।
পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকা পরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই শিক্ষার্থীর শরীরের ৭৫ শতাংশই পুড়ে যাওয়ায় তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এ ধরনের রোগীর চিকিৎসা করতে খুবই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ।পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে। #যুগান্তর