ডায়াবেটিসে পা কেটে গেলে বা ঘা হলে তা সারিয়ে তোলা বেশ কঠিন৷ অনেক সময় পা কেটেও ফেলতে হতে পারে৷ তাই মূল রোগ অর্থাৎ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি পায়ের যত্ন নেয়াও দরকার৷
ত্বকের যত্ন নেয়া যতটা জরুরী, ডায়াবেটিস থেকে থাকলে সে ভাবেই পায়ের যত্নও নিতে হবে৷ কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মাত্র ১০ বছরেই স্নায়ু দুর্বল হয়ে পায়ের চেতনাবোধ কমে গিয়ে দেখা দিতে পারে ডায়াবিটিক নিউরোপ্যাথি৷
ডায়াবেটিসে পা কেটে গেলে বা ঘা হলে তা সারিয়ে তোলা বেশ কঠিন৷ অনেক সময় পা কেটেও ফেলতে হতে পারে৷ তাই মূল রোগ অর্থাৎ ডায়াবেটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি পায়ের যত্ন নেয়াও দরকার৷
পায়ের যত্ন
বাহির থেকে ফিরে পায়ের তলা পরীক্ষা করে দেখুন৷ কোনও রকম কাটা-ছড়া বা প্রদাহ দেখতে পাচ্ছেন কি না। প্রয়োজনে বাড়ির কারোর সাহায্য নিন। পায়ের নীচে ছোট আয়না ধরেও দেখতে পারেন৷ গোসলের আগে হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে পা পরিষ্কার করে, শুকিয়ে গেলে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান৷ দুই আঙুলের ভাঁজ যেন শুকনা থাকে৷ পায়ের তলা ঘামার ধাত থাকলে দুই আঙুলের ভাঁজে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না৷
কখনও খালি পায়ে হাঁটবেন না৷ জুতা পরুন মোজা সহ। সেলাই না করা মোজা পরবেন৷ কারণ চেতনাবোধ কমে যায় বলে পা কেটে গেলে বা ফোস্কা পড়লে টের পাওয়া যাবে না৷ সেখানে ময়লা লেগে সংক্রমিত হয়ে ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে৷ পায়ের নখ সোজা করে কাটুন৷ নখের কোণা চামড়ার মধ্যে ঢুকে গেলে নিজে কিছু না করে বা পার্লারে না কাটিয়ে পায়ের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
জুতা পরুন ঠিক মাপের৷ অন্যথায়, ফোস্কা পড়তে পারে৷ বিকালের দিকে পা ফুলে ছেড়ে দেয়, তাই পায়ের মাপ বুঝে জুতা সে সময়ই কিনুন৷ নাহলে, সকালে কিনলে বিকালে ওই জুতো পায়ে টাইট হবে৷
বাড়তি সতর্কতা
১। পা কেটে গেলে বা ফোস্কা পড়লে ভাল করে ড্রেসিং করুন৷
২। ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি ডিজিজ হয়ে থাকলে যেখানে–সেখানে পেডিকিওর করানো থেকে বিরত থাকুন
৩। বছরে একবার পা-বিশেষজ্ঞের কাছে পায়ের চেক-আপ করাতে যান৷
কেন পেডিকিওর করানো থেকে বিরত থাকবেন?
পার্লারের যন্ত্রপাতি পরিশোধিত না হলে বা যিনি করবেন তার ট্রেনিং না থাকলে কিছু সমস্যা হতে পারে৷ তাই লক্ষ্য রাখুন সে সব দিকেও। পায়ের শক্ত চামড়া গরম পানিতে ভিজিয়ে নরম করে কেটে ফেললে সেখান থেকে সংক্রমণ হতে পারে৷ নখের কোনা চামড়ার ভিতরে বাড়লে, মরা চামড়া জীবাণুমুক্ত কাঁচি দিয়ে কেটে এমন করা উচিত, যাতে তা আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে আসে৷ এরপর পুরো নখ সমান ভাবে কাটতে হবে। কিন্তু এমনটা না করে সরু কাঁচি ঢুকিয়ে নখের কোনা কেটে দিলে সংক্রমণ হতে পারে৷ সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সেখান থেকে পুরো পায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে৷
দীর্ঘ দিন ডায়াবেটিসে ভুগলে পায়ে চেতনাশক্তি কমে যায়। তাই গরম পানিতে পা ডোবানো বা ঝামা দিয়ে ঘষার সময় খেয়াল না রাখলে কেটে–ছড়ে গিয়ে বড় বিপদ হতে পারে৷
পায়ে ঘা হলে কি করবেন?
১। প্রথম অবস্থায় স্যালাইনে ঘা ধুয়ে জীবাণুমুক্ত গজে জায়গাটা ঢেকে রাখুন
২। ঘা না শুকানো পর্যন্ত একটু কম চলাফেরা করলে ভাল
৩। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যান্টিবায়োটিক খান
৪। বড় ঘায়ে বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিক জুতো পরতে হতে পারে
৫। ঘা না শুকালে, পা ফুলে গেলে, পা–আঙুল বা নখের রং বদলে গেলে, পা স্বাভাবিকের তুলনায় ঠাণ্ডা বা গরম হলে তা বিপদের লক্ষণ৷
ডায়াবিটিক জুতা কিভাবে চিনবেন?
এর ইন-সোল সাধারণ জুতোর চেয়ে ৮–১০ মিমি পুরু হয়ে থাকে৷ ফলে পায়ের তলার চাপ ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রেশার পয়েন্টে ঘায়ের সুযোগ কমে যায়৷ জুতার টো–বক্স বেশ চওড়া রাখুন, যাতে আঙুলে চাপ পড়ে না৷ হিল কাউন্টার যেন শক্ত ও উঁচু হয় যাতে ড্রেসিং-সহ পা এতে ঢুকে যায়৷ জুতায় ভেলক্রো লাগানো থাকলে ভাল হয়। তা হলে পা ফুলে গেলে জুতা ঢিলে করা যাব।