গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়া ফণী শনিবার সন্ধ্যার পর ভারতের আসামের দিকে চলে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর। অধিদফতর বলছে, দক্ষিণাঞ্চলে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে রোববারও বৃষ্টিপাত হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস শনিবার (৪ এপ্রিল) বেলা ৩টার পর এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার পর ফণী বাংলাদেশের বাইরে চলে যাবে। এটা উত্তর-পূর্ব দিকে যাবে। উত্তর-পূর্ব দিকে বাংলাদেশের বাইরে রয়েছে ভারতের আসাম। সে জন্য বলা হচ্ছে, আসামের দিকে চলে যাবে।’
এর আগে বেলা ১টার পর অধিদফতরের উপ-পরিচালক আয়েশা খাতুন জানান, ফণী বর্তমানে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আকারে নেই। এটি এখন গভীর নিম্নচাপ আকারে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। বিপদ ও হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে দেশের চারটা সমুদ্রবন্দরকে (মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
স্থানীয় সতর্কতা সংকেতে তারা কাউকে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে বলেন না। তবে অমাবস্যার কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যতা বিরাজ করছে। সে কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোয় (চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো) ২ থেকে ৪ ফুট উঁচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রবন্দরে যেসব মাছধরা ট্রলার আছে তাদের এখনও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ রয়েছে আবহাওয়া অফিসের।
আয়েশা খাতুন আরও বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেশের অনেক স্থানে ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। অনেক স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। আমাদের পূর্বাভাস হচ্ছে, এখনও গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হতে পারে ঝড়ো হাওয়াসহ। যার গতিবেগ থাকতে পারে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার।’
‘আমাদের যে পূর্বাভাস আছে, আজকে যে ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে, সেটি অব্যাহত থাকবে। আগামীকালও (রোববার) বৃষ্টিপাত হবে। তারপর ধীরে ধীরে এটা কমতে থাকবে।’
‘ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চল এবং এর আশপাশের এলাকায় যে ঘূর্ণিঝড় ফণী অবস্থান করছিল, সেটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়েছে। ফণী দুর্বল হয়ে আজকে দুপুর ১২টায় গভীর নিম্নচাপ আকারে পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।’
‘এ গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হচ্ছে। সাগর এখনও উত্তাল আছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে দেয়া ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলেছি। তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেতের পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের যে চারটা সমুদ্রবন্দর (মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার) আছে, এই চারটা সমুদ্রবন্দরকে আমরা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছি,’বলেন তিনি।
বিপদ সংকেত নামিয়ে স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দিতে বলেছেন, ৫ থেকে ৬ লাখ লোক যাদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে, তারা এখন বাড়িতে ফিরে যেতে পারবেন কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ঝূর্ণিঝড় কেন্দ্রে যারা আশ্রয় নিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন এটার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আমাদের কাজ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা জানানো। তবে স্থানীয় সতর্কতা সংকেতে আমরা কাউকে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতে বলি না।’