সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসা এক নারীসহ তিনজনকে আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী সদর উপজেলার মো. ইমরান ও কিশোরগঞ্জের মো. শফিকুল বাশারকে আটক করা হয়। ইমরান ঢাকার মালিবাগ এলাকায় বসবাস করেন বলে জানান। তবে শফিকুল বাশার ঢাকার কোথায় থাকেন তা জানাননি। তারা দীর্ঘদিন যাবত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বিচারপ্রার্থী মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন।
অন্যদিকে, রাজশাহীর বাগমারা অঞ্চলের বৈলসিংহ এলাকার তানজিম তাসকিন আদুরী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পরিচয়ে প্রতারণা করে আসছেন। তানজিমা তাসকিন আদুরী ঢাকার মাদারটেক বাসাবো এলাকায় বসবাস করতেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে বুধবার আটক করে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয় বলেও জানায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যালয় সূত্র।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের অপকর্ম ও প্রতারণার বিষয়ে জানতে পেরে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুরে সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদেরকে কার্যনির্বাহী কমিটির কক্ষে নিয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা তাদের অপরাধ স্বেচ্ছায় স্বীকার করেন।
দুইদিনে মোট তিনজন ভুয়া আইনজীবীকে আটক করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন সমিতির সহকারী সুপারিনটেন্ড মো. রফিক উল্ল্যাহ। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও টাউট-দালাল নির্মূল আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া দালাল-টাউটদের ধরার কাজে সহযোগিতা করছেন।
অ্যাডভোকেট ফরহাদ জানান, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ওই নারী টাউটকে আটকের পর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন নামে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করতেন আদুরী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন দাবি করলেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অনুসন্ধানে তার সত্যতা মেলেনি। এছাড়া নিজেকে ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী হিসিবেও দাবি করতেন এই নারী।
দেখা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এবং গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিমের সঙ্গেও আদুরীর ফেকবুকে ছবি রয়েছে। আইনজীবী সূত্র জানায়, এসব সিনিয়র এবং ভিআইপিদের কাছাকাছি গিয়ে কৌশলে ছবি তুলে নিজেকে তাদের কাছের লোক পরিচয় দিতো।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম বলেন, এমনি অনেক টাউট আছে যাদের হাইকোর্টে প্র্যাক্টিস করার অনুমতি নেই অথচ তারা নিজেকে হাইকোর্টের উকিল বলে নির্বিবাদে পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছে আর ভিজিটিং কার্ডেও অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট লিখে দেদারসে উকালতি করে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে টাউট নির্মূলের দাবিতে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে টাউট-দালাল ও তাদের সহকর্মীদের নির্মূলের দাবিতে মানববন্ধন করেন আইনজীবীরা।