পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারী কলেজের এক শিক্ষককে লাথি মারার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।পরীক্ষায় নকল করতে না দেওয়ায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জুন্নুনের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, কলেজ গেট থেকে মোটরসাইকেলে করে বের হওয়ার সময় কয়েকজন যুবক এসে অতর্কিত হামলা চালায় শিক্ষক মাসুদুর রাহমানের উপর। তাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি ও থাপ্পড় মারা হয়। ফেলে দেয়া হয় মাথার পাগড়িও। একপর্যায়ে তিনি বেরিয়ে যেতে চাইলে পেছন থেকে এসে তাকে লাথি মারে এক যুবক।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমি এইচএসসি পরীক্ষার ডিউটি শেষ করে কেন্দ্র থেকে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলাম। তখন হঠাৎ পেছন থেকে আমাকে বলা হয় এই দাঁড়া। আমি দাঁড়ালে কয়েকজন মিলে আমাকে মারতে শুরু করে। সেসময় আমাকে বলা হয়; তুই আর কলেজে আসবি না; কলেজে আসলে তোর হাত কেটে নেব। বাংলা বিভাগে আগুন ধরিয়ে দেব।’
‘‘এরপর আমার সিনিয়র শিক্ষকরা এগিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন এবং আমাকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। এরপর থেকে আমার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাকে কিছুদিনের জন্য কলেজে যেতে মানা করেছেন শিক্ষকরা।’’
বিষয়টি তদন্তে সহযোগী অধ্যাপক ড. কৃষ্ণেন্দু কুমার পালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ড. ইসমত আরা ও সহকারি অধ্যাপক হারুনুর রশিদসহ কলেজের কর্মচারি ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ মোট সাতজন। কমিটির তদন্তে ওই ছাত্রদের অপরাধ উঠে এসেছে।
কমিটির প্রধান কৃষ্ণেন্দু কুমার পাল বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তের পর আমরা প্রাথমিকভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক নেতা ও কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টা যেহেতু এভাবে সমাধান করা যচ্ছে না। উপরন্তু পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে সেহেতু আমরা এখন এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেবো। টিচারদের নিরাপত্তার জন্য সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করেই আমরা এটি করবো।’
জানা যায়, ঘটনার শুরু ৬ মে। এইচএসসি পরীক্ষার ডিউটি করছিলেন প্রভাষক মাসুদুর রহমান। সেসময় দেখতে পান তার কক্ষের দু’জন পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বনের চেষ্টা করছে। তিনি তাদের খাতা কেড়ে নেন এবং নিয়মানুযায়ী যতটুকু দায়িত্ব পালন করা দরকার তা করেন। এতেই বাধে বিপত্তি। ঘটনার পর ৫ দিন চুপ করে থাকলেও গত ১২ মে এইচএসসি পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হবার পথে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, প্রভাষক মাসুদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে। ধর্মপরায়ণ ও ভালো শিক্ষকতার কারণে সবার মাঝে জনপ্রিয় তিনি।