বগুড়ায় বিএনপির কার্যালয়ে এক পক্ষ তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে, আবার সেই তালা ভাঙছে অন্য পক্ষ। এসব ঘটনায় কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের বহিষ্কারও করা হচ্ছে। নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় জেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে দখল-পাল্টা দখলকে কেন্দ্র করে যুবদল ও ছাত্রদলের ৮ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে । এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহিষ্কার হওয়া দুইজন শীর্ষ নেতাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বগুড়া জেলা কমিটি শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত ২৫ এপ্রিল জেলা বিএনপির নেতৃস্থানীয় নেতাদের ডেকে পাঠানো হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে। সেখানে বিএনপির সহ-সভাপতি বরকতউল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-সম্পাদক শাহীন শওকত, কেন্দ্রীয় সদস্য ওবাইদুর রহমান চন্দন এবং বগুড়ার নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তারেক রহমান কথা বলেন।
বৈঠক চলাকালে বগুড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র এবং প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমু আগের কমিটি বহাল রাখার কথা বলেন এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর পরই ওই দুই নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ খবরে বগুড়ায় বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে ভিপি সাইফুল ইসলামসহ বহিষ্কার হওয়া দুই নেতার অনুসারীরা। পরদিন কেন্দ্রীয় নির্দেশে ভিপি সাইফুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সেই তালা খুলে দলীয় কার্যক্রম চালান।
এদিকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ২৯ এপ্রিল সাধারণ সভা ডাকা হয় বিএনপি কার্যালয়ে। এই সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চানসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। সেখানে আহ্বায়ক করা হয় ভিপি সাইফুল ইসলামকেই। এই সভায় ভিপি সাইফুল ইসলামের প্রতিপক্ষ অন্য গ্রুপ যোগ দেয়নি।
একই দিন সন্ধ্যায় সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান লালুর বাড়িতে আরও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাল্টা আহ্বায়ক কমিটি প্রস্তাব করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়। দুটি কমিটি গঠনেই জেলা বিএনপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেয়। এরই প্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে বগুড়া জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করার পর ১৫ মে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে। কমিটিতে ভিপি সাইফুল ইসলামের অনুসারীদের নাম কম থাকায় বিক্ষোভ দেখায় তার অনুসারীরা। স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল ও অপর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী ও পদবঞ্চিতরা নতুন ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
তারা সন্ধায় শহরের নওয়াববাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে অবস্থান ও দলীয় কার্যালয়ের দখল নেয়। একর্পযায়ে তারা দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। সেখানে পুলিশও মোতায়েন করা হয়।
পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নতুন দায়িত্ব পাওয়া আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের নেতৃতে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ জেলা বিএনপির অফিসে গিয়ে পদবঞ্চিত বিদ্রোহী গ্রুপের দেয়া তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে দখল নেয়। সেখানে তারা গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান নেয়।
নতুন কমিটির নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আজগর হেনা রাতে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে তালা ভেঙে ভিতরে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। নতুন কমিটি রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। পরে তারা সাবেক সংসদ সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর বাড়িতে যান। বিদ্রোহী গ্রুপ এ খবর পেয়ে গভীর রাতে সেখানে গিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়ির সামনে থাকা বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।
এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, দলীয় কার্যালয়ে তালা, আগুন ও সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার কেন্দ্র থেকে পৌর কাউন্সিলর ও জেলা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন পশারি হিরু, তৌহিদুল ইসলাম বিটু, জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুকুল ইসলাম ফারুক, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদ রানাসহ ছয়জনকে বহিষ্কার এবং জেলা ছাত্রদলের সিনিয়ার সহ-সভাপতি আবু জাফর জেমস ও সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম আউয়ালের পদ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। এখানে কারও যদি অভিযোগ অনুযোগ থাকে তবে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং আমাদের বলতে পারে। তা না করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ঠিক নয়। প্রত্যেক দলে কমিটি নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, পরে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশে উপজেলা নির্বাচনের পক্ষে ও নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করায় বুধবার রাতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মীর শাহে আলম ও সদর থানা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে। সাবেক এমপি লালুর বাসার সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল রাস্তার ওপরে ফেলে দিয়ে যায় বিক্ষুব্ধরা। তবে এ ব্যাপারে কেউ এখনো থানায় কোনো অভিযোগ করেনি।
সূত্র; জাগো নিউজ২৪.কম