মোজাজ্জাজ আল মাদলাজী; বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির একটি। নবুওয়াতপ্রাপ্তি থেকে পরবর্তী তের বছর রাসূলুল্লাহ (সা.) যা কিছু অর্জন করেছিলেন তাঁর আনুষ্ঠানিক উপস্থাপন ছিল বদর যুদ্ধ। একদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে সত্ত্বার অস্তিত্ব ও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যেমন এ দিনে মঞ্চায়ন হয়েছিল। অন্যদিকে তাঁর সাহাবাগণ (রা.) ঈমানের যে সাক্ষ্য দিতেন ও তাঁর জন্য সর্বস্ব ত্যাগের যে ঘোষণা দিতেন তারও ষোলকলাপূর্ণ করে দেখিয়েছিলেন বদরের যুদ্ধে।
মোটকথা আল্লাহ ও তাঁর বন্দা উভয়েই তাঁদের স্ব-স্ব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করে একটি নতুন সভ্যতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। যা পরবর্তী এক হাজার বছর পর্যন্ত পৃথিবীর পরাশক্তিরূপে দাঁড়িয়েছিল। যে ঘোষণার সাথে কেবল ইসলাম নয়, বরং বিলুপ্ত প্রায় মানবতার ও মানুষের ভাগ্য সবকয়টিই জড়িয়েছিল দিনটির সাথে।
বদরের দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়া থেকে এটি আরো স্পষ্ট হয় যে, ‘হে আল্লাহ! যদি তুমি এই ক্ষুদ্র জনপদকে ধ্বংস করে দাও তাহলে দুনিয়ার বুকে আর তোমার ইবাদত করার কেউ থাকবেনা’। (যা’দুলমা’আদ) আল্লাহ তা’য়ালা এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ (সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) বলে সম্বোধন করেছেন। (আল আনফাল/৪১) বিখ্যাত চিন্তাবিদ আবুল হাসান আলী নদভী যথার্থ বলেছেন, ‘এরপর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলমানরা যত বিজয় ও সাফল্য অর্জন করেছে, যতগুলো সাম্রাজ্য কায়েম করেছে তার সবই এ প্রকাশ্য ও অবধারিত বিজয়েরই নিকট ঋণী যা বদর প্রান্তের সেই মুষ্টিমেয় দল লাভ করেছিল।’ (নবীয়ে রহমত)
বদর যুদ্ধ:
মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ও হত্যার ষড়যন্ত্র টের পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদেরসহ মদিনায় হিজরত করতে বাধ্য হন। সহায় সম্পদহীন মদিনার মুসলমানদের প্রতি তাঁদের নির্যাতনের মানসিকতা ও মুসলমানদের ধ্বংসের শপথ থেকে তখনো তারা পিছুপা হয়নি। এমনকি তাদের সামরিক বাহিনী কখনো কখনো মদিনার সীমান্ত ও চারণভূমি পর্যন্ত পৌঁছে যেত। ছোট খাটো সংঘর্ষ ও হত মুসলমানদের সাথে। (সিরাতে ইবনে হিশাম, যা’দুলমা’আদ)।
এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) সংবাদ পেলেন আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে কুরাইশদের বিরাট এক বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে মক্কা যাচ্ছে। এ সম্পদ ছিল তাদের, যারা মুসলমানদের সম্পদহারা সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব করেছে এবং যারা তাদের সমুদয় সম্পদ ও শক্তি মুসলমানদের ধ্বংস করার জন্য ব্যয় করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক এ কাফেলার সম্পদও যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজে লাগবে তাতেও কোন সন্দেহ ছিলনা। কাজেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এ কাফেলাকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। সাথে সৈন্য মাত্র ৩১৩ জন (মতান্তরে ৩১৪ বা ৩১৫, ফাতহুলবারী/৭)।
সূত্র; দি ডেইলি ক্যাম্পাস