গত শনিবার রাজধানীর মিরপুরে নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে পাঁচতলা থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেন এক কিশোরী মা। এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদের সাথে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি সন্তান হত্যাকারী ওই মায়ের ছবি নয়। গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্রাবন্তী অনন্যা নামে এক তরুণী ফেসবুক লাইভে এসে এ কথা বলেন।
শ্রাবন্তী অনন্যা লাইভে এসে মিরপুরের সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, ওই ঘটনায় কয়েকটি অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে ভুলভাবে তার একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সন্তান হত্যাকারী কিশোরী মা হিসেবে।
এঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রাবন্তী অনন্যা তার ভিডিও ক্যাপশনে “মিথ্যা ছবি প্রচার এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই”- এই বাক্যটি ব্যবহার করা করেন।
এই তরুণী বলেন, “আমি দেখেছি কিছু অনলাইন নিউজে আমার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। নিউজ ঠিক আছে। কিন্তু নিউজে ব্যবহৃত ছবিটা আমার। এতে আমি সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মানসিকভাবে আহত হয়েছি। কালকে থেকে আমার ঘুম নেই, খাওয়া নেই। কেন আমি একটা মিথ্যা অপবাদ নিয়ে সমাজে চলবো?”
শ্রাবন্তী জানান, তার ঘনিষ্ঠজনদের পরামর্শে খিলক্ষেত থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেছেন। লাইভে সেই জিডির কপিও দেখান তিনি। উদ্বিগ্ন এই তরুণী আরও বলেন, “সবাই তো আর নাম জিজ্ঞাসা করবে না।
সবাই ছবিটাই দেখবে। আমি রাস্তায় বের হলে মানুষ বলবে, এই মেয়েটাই তার সন্তানকে মেরে ফেলেছে। আমি কেন এই অপবাদ নিয়ে সারাজীবন চলবো। এজন্য আমি জিডি করেছি।
আমি এর বিচার চাই। সবার কাছে অনুরোধ করছি আপনারা যারা ছবিটি বা এ সংক্রান্ত নিউজ শেয়ার করেছেন তারা সেটি ডিলিট করে দেন।” লাইভে আসার আগে গত রাতেই তার আইডিতে এ সংক্রান্ত আরও দুটি পোস্ট করেন তিনি।
একটিতে তার ছবি প্রকাশ করা কয়েকটি পোর্টালের প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট যুক্ত করে লিখেছেন, “গত কাল সন্ধার পর থেকে,,বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ফেসবুক পেজ,,ও ফেসবুক গ্রুপ গুলাতে,,জান্নাতুল নেছা নামক (১৭) নবজাতক শিশুকে ৫ তলা থেকে ফেলে দেওয়ায়,, সেই মেয়েকে পুলিশ আটক করেছে,কিন্তু বাংলাদেশের বড় বড় নিউজ পোর্টাল গুলো ও গ্রুপে,,সেই নিউজ এ সদ্যজাত শিশুটির পাশে আমার ছবি প্রকাশ করে,,এতে আমি সামাজিক ভাবে বিভ্রান্ত হই,আমাকে সামাজিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ করা হচ্ছে,,তাই আমি আমাদের বাংলাদেশের চিত্রনায়ক ইমন খান ভাই ও আরো কয়েকজন এর পরামর্শে আমি থানায় জিডি করতে বাধ্য হই,,আমি এই ভুয়া নিউজ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি,,এবং আমি আইনের কাছে এর সঠিক বিচার চাচ্ছি,,।” (পোস্টাদাতার বানানরীতি সেভাবেই রাখা হয়েছে)।
এর আগে অন্য একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “কেনো ভাই ও বোন তোমরা অন্যের নিউজ এর উপর আমার ছবি দিয়ে গুজব ছরাচ্ছো, আগে নিউজ সেয়ার দেওয়ার আগে বিবেচনা করো,যে কতটুকু সত্য,নইলে তোমাদের একটা মিথ্যা সেয়ার কারো জীবন চলে যেতে পারে,আর যে মেয়ে এই কাজটি করছে আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি,বাচ্চা জন্ম দিয়েই ফেলছে, তাকে মারা ঠিক হয়নাই,,আল্লাহ এর সঠিক বিচার করবেন।”
রূপনগর আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর রোডের ১৮ নম্বর বাড়িতে ঘটা এই ঘটনায় পুলিশ জানায়, ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশার ফলে অনাকাঙ্খিতভাবে বাচ্চাটির জন্ম হয়।
ফলে লোক লজ্জার ভয়ে সবার চোখের আড়ালে প্রসবের পর বাচ্চাটিকে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে বাইরে ফেলে দেন মা। ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ অভিযুক্ত মাকে আটক করে। আটক অবস্থায় তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন। কিশোরী মাকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে চিকিৎসা দিয়েছে।
কিশোরী মায়ের পরিচয় প্রকাশ না করার স্বার্থে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে তার ছদ্মনাম ব্যবহার করে ‘জান্নাতুন নেছা’। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় জান্নাতুন নেসার মা, মায়ের দ্বিতীয় স্বামী এবং স্বামীর ছোট ভাইকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে দুয়েকটি সংবাদমাধ্যম ‘সংগৃীত’ সূত্রে ‘জান্নাতুন নেছার ছবি’ বলে একজন তরুণীর ছবি প্রকাশ করে। কোথাও ছবিটিতে চেহারা ‘ব্লার’ (ঝাপসা) করা হয়েছে। আবার কোথাও করা হয়নি।