এবার রাজবাড়ী সদর উপজেলায় বোরকা পরে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
শনিবার সকালে এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা ফজলুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কিশোরী খানখানাপুর তমিজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
খবর পেয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার ও সদর থানা পুলিশের ওসিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় মামলার আসামি শিল্পীর বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু শিল্পী বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
স্কুলছাত্রীর মা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের দিন (বুধবার) স্থানীয় প্রতিবেশী শিল্পী বেগম আমার মেয়ের কাছে অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু আমার মেয়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে দুই বোন বসে জাম খাচ্ছিল, আমি তখন ঘরে ঘুমাচ্ছিলাম। এ সময় ছোট মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙে যায়।
বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বোরকা পরা চারজন তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে ছোট মেয়ে জানায়। তখন আমিও চিৎকার করতে থাকি। এতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঘরের পেছনের পাটক্ষেত থেকে বড় মেয়েকে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেয়া হয়।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. সোহেল ব্যাপারী বলেন, শুক্রবার রাতে নিরাপত্তাহীনতায় থেকে এ ঘটনাটি নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেই। কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার পুলিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে বিস্তারিত জেনে আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেন। প্রতিবেশী শিল্পীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এর মূল কারণ জানা যাবে।
সোহেল ব্যাপারী আরও বলেন, পয়লা বৈশাখের দুইদিন আগে স্থানীয় বাজার থেকে আমার বোন বাড়ি ফেরার পথে কিছু বখাটে গতিরোধ করে নির্যাতন করে। ওই সময় বখাটেরা আমার বোনের সঙ্গে ছবি তোলে। পরে ওই ছবির কথা বলে বোনের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে তারা। বিষয়টি পুলিশকে জানাবে বলায় আমার বোনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়।
স্কুলছাত্রীর বাবা ফজলুর রহমান বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে বাড়িতে আসি। বাড়ি এসে জানতে পারি চারজন বোরকা পরে আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে বাড়ির পেছনের পাটক্ষেতে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়েকে উদ্ধার করে প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিল্পী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।
আহত স্কুলছাত্রী জানায়, পাশের গ্রামের রাজু নামে এক ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। পছন্দের কথা স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানতেন আর এটাকে কেন্দ্র করেই তিনি আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানালে বৃহস্পতিবার শিল্পী আক্রোশে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে আমার জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রতিবেশী সাথী সরকার জানান, চিৎকার-চেঁচামেচিতে আমরাও এগিয়ে গিয়ে ওই স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করি। তার মাথায়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গায়ের জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল।
পাঁচুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর বলেন, এটি ভয়াবহ ঘটনা। এর আগেও ফেনীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। এরকম ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় শিল্পী বেগমসহ অজ্ঞাত চার ব্যক্তির নামে একটি মামলা করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দুটি দল মাঠে কাজ করছে এবং আসামি ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না। আসামিদের গ্রেফতার করার পর মূল কারণ বলা যাবে। বর্তমানে মেয়েটি সুস্থ আছে। তাকে নিরাপত্তা দিতে সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের অভিযোগে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। সূত্র; জাগো নিউজ২৪.কম