কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি; কুড়িগ্রামের উলিপুরে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাহেরা বেগম সারা আকুতি জানিয়েছেন। পাষণ্ড সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন ভাইয়ের বাড়িতে।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সন্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এ অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কাজী পাড়া গ্রামে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুছ বকসীর স্ত্রী পাঁচ সন্তানের জননী সাহেরা বেগম সারা (৬৫) বড় ছেলে ও সেজো ছেলের বিরুদ্ধে তাকে মারধরসহ নানা ভাবে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সাহেরা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, স্বামী মুক্তিযোদ্ধা কুদ্দুছ বকসী প্রায় ৮ বছর পূর্বে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে তিনি বসবাস করে আসছেন। বৃষ্টির সময় সেই ঘরে পানি পড়ে, অতি কষ্টে থাকেন তিনি।
তিনি জানান, ৫ সন্তানের মধ্যে চার ছেলে ও একটি প্রতিবন্ধি মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে সামছুল আলম বকসী ও সেজো ছেলে সিরাজুল ইসলাম বকসী সব সময় তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে আসছেন। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা উত্তোলন করার পর প্রতিবারই ওই দুই সন্তান সমুদয় টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় টাকা দিতে না চাইলে জীবননাশের হুমকি দিত।
সাহেরা বেগম জানান, গত রমজান মাসে পিতার বাড়ি থেকে প্রাপ্ত জমি বিক্রয়ের আড়াই লাখ টাকা সন্তানদের মাঝে বন্টন করে দিলে আবারো টাকা আনার জন্য শরীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ফজরের নামাজের অজু করার জন্য টিউবওয়েল চাপার শব্দে ওই দুই সন্তানের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে বলে তারা উঠে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ পারাসহ ঝুঁপড়ি ঘরে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়। এ ঘটনা আমি প্রতিবেশিসহ আমার বড় ভাইকে জানালে তারা সকলে মিলে আলোচনা করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকা থেকে ঘর, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন আলাদা ভাবে নির্মান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ওই দুই সন্তান শরীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমি জীবন রক্ষার্থে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় নিজবসত ভিটা ছেড়ে উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের আপুয়ারখাতা এলাকার আউদিয়ারপাড় গ্রামে বড় ভাই মাওলানা আব্দুল হাই সিদ্দিকির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
মাও. আব্দুল হাই সিদ্দিক জানান, ভাতার টাকা দিয়ে ছোট বোন সাহেরা বেগমের ঘর মেরামত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই ভাগিনারা তাদের মাকে মারধরসহ জীবননাশের হুমকি দেয়ায় আমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। টাকার জন্য তারা সব সময় আমার বোনের ওপর নির্যাতন করে আসছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল কাদের অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে উলিপুর থানার ওসিকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে।