আজ (২৩ জুন) রোববার ৭১তম বর্ষে পা রাখল উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ক আলোচনা সভা, সেমিনার, র্যালি, আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন এ দলটি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে রয়েছে আজ সূর্যোদয়ের সময় কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও সারাদেশের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৯টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন। বেলুন ও পায়রা অবমুক্ত। ঢাকার বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা ও তৃণমূলের প্রবীণ নেতাদের সম্মাননা দেয়া হবে। ২৫ জুন মঙ্গলবার দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরবর্তীতে হাতিরঝিল ও রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে স্মরণিকা, ক্রোড়পত্র এবং পোস্টার প্রকাশ করেছে দলটি।
রাজধানীসহ সারাদেশে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সারাদেশের জেলা, উপজেলা, মহানগরে সভা-সমাবেশ, সেমিনার, স্মরণিকা প্রকাশ এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। গত তিন যুগের বেশি সময় ধরে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন ও ৯১ নবাবপুর রোডের পুরাতন অফিসেও নানা কর্মসূচি থাকবে। রাজধানীর অন্যান্য কার্যালয়ের মতো এই দুটি স্থানও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়, ৯১ নবাবপুর রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ দেশের মহানগর ও জেলা শহরে নানা রঙের আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থানে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে।
৯১, নবাবপুর রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের পুরাতন কার্যালয় থেকে ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এখানেই বসতেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসে অফিস করেছেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। ১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ঠিকানা হয়।
রোজ গার্ডেন ও ৯১ নবাবপুর রোডের পুরাতন কার্যালয়টি ঢাকার ওয়ারী থানায় পড়েছে। আলাপকালে এই থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু জানান, আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সাথে জড়িত রোজ গার্ডেন ও ৯১ নবাবপুর রোডের পুরাতন কার্যালয় এই এলাকায়। এরইমধ্যে আমরা স্থান দুটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে বিভিন্ন ব্যানার রঙের ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। আলোকসজ্জাসহ বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
এদিকে, সারাদেশের প্রবীণ নেতাদের ঢাকায় এনে বিশেষ সম্মাননা দেবে আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে প্রতি জেলা থেকে দু’জন প্রবীণ নেতার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। দলের নেতারা বলছেন, ত্যাগী নেতাদের উৎসাহ দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যারা দলের জন্য কাজ করবেন, তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে দল তাদেরকে ভুলে না।
সূত্রমতে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রতি জেলা থেকে দুইজন করে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হবে। এরইমধ্যে বিভাগীয় সাংগঠনিক সভায় তৃণমূল নেতাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলা সংগঠনগুলোও দু’জন করে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতার নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে।
জেলা ও মহানগরীর নেতারা বলছেন, যারা দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছেন, এখন বয়সের কারণে কোনো দায়িত্বে রাখা যাচ্ছে না- এমন নেতাদের নাম বাছাই করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, প্রবীণ নেতাদের নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দু’জন করে মোট চারজনের নাম জম দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। শোভাযাত্রায় প্ল্যাকার্ড, বেলুন, জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং গণসংগীত, ব্যান্ড পার্টি, ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আওয়ামী লীগের র্যালিতে অংশগ্রহণ করবে যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের বিভিন্ন সফলতা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচারণায় নানা স্লোগান দেবে তারা। সূত্র; সময় টিভি অনলাইন